পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
প্রাকৃতিকী

আকর্ষণ করিয়াছিল। জলস্থল ও আকাশের কোন স্থূল ঘটনাই মহাপণ্ডিত আরিষ্টটলের তীক্ষ্ণদৃষ্টিকে এড়াইতে পারে নাই। সেই অবৈজ্ঞানিক যুগে প্রত্যেক প্রাকৃতিক ঘটনারই তিনি এক একটা সহজ ব্যাখ্যা দিবার চেষ্টা করিতেন। প্রাণিদেহের উষ্ণতা-সম্বন্ধে তিনি বলিতেন, কাঠ পোড়াইয়া বা কাঠে কাঠে ঘর্ষণ করিয়া আমরা যে তাপ উৎপন্ন করি, তাহা শারীরিক তাপ হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। মহাকাশের অধিবাসী জ্যোতিষ্কগণ যে অগ্নি ধারণ করিয়া আছে, তাহারি দুই এক স্ফুলিঙ্গ প্রাণিদেহে আশ্রয় গ্রহণ করে বলিয়াই তাহা এত উষ্ণ। মহাকাশের জ্যোতিষ্কদিগের অত্যাশ্চর্য্য গতিবিধি লক্ষ্য করিয়া আরিষ্টটল্ তাহাদিগকে বুদ্ধিমান জীবের পর্য্যায়ে ফেলিতেন।

 এই ত গেল দেহতাপের পুরাবৃত্তের কথা। বলা বাহুল্য, পরবর্ত্তী বৈজ্ঞানিকগণ ঐ সকল কথায় বিশ্বাস করেন নাই। সপ্তদশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিকগণ অক্সিজেনের অস্তিত্ব জানিতেন না। কাঠ ও কয়লা ইত্যাদির দহনের কারণ নির্দ্দেশ করিতে গিয়া, ইঁহারা বায়ুতে মিশ্রিত কোন এক দাহ্য পদার্থের অস্তিত্ব কল্পনা করিয়া লইতেন এবং তাহাই কাঠ ও কয়লাকে পোড়ায় বলিয়া সিদ্ধান্ত করিতেন। প্রাণিদেহের তাপের কথা জিজ্ঞাসা করিলে তাঁহারা বলিতেন, সাধারণ দাহ্য পদার্থ যেমন বায়ুতে পুড়িয়া তাপের উৎপত্তি করে, বায়ুতে মিশ্রিত সেই অজ্ঞাত পদার্থ ভুক্তদ্রব্যকে দেহের অভ্যন্তরে পোড়াইয়া সেই প্রকারে দেহকে উষ্ণ রাখে। প্রিষ্ট্‌লি ও ল্যাভোসিয়ার কর্ত্তৃক অক্সিজেনের আবিষ্কার হইলে সকলেই বুঝিয়াছিলেন, বায়ুর অক্সিজেনই দাহ্য-পদার্থের অঙ্গার ও হাইড্রোজেনের সহিত মিলিত হইবার সময়, যে তাপের উৎপত্তি করে তাহাই অগ্নির তাপ। অগ্নি-তাপের এই ব্যাখ্যানে দেহ-তাপেরও উৎপত্তি নির্ণীত হইয়া পড়িয়াছিল। বৈজ্ঞানিকগণ বলিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, সাধারণ দাহ্যবস্তুর উপাদান যেমন