পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাণিদেহের উত্তাপ
১২৭

শতকরা পঁচিশ ভাগ প্রকৃত কাজে লাগে এবং অবশিষ্ট ৭৫ ভাগ দেহকে গরম করিয়াই ব্যয়িত হয়। কিন্তু এই গরম করা ব্যাপারটাকে কোনক্রমে অনাবশ্যক কাজ বলা যায় না। দেহ সামগ্রী Protoplasm দ্বারা কাজ চালাইতে হইলে, তাহাকে উষ্ণ রাখা একান্ত প্রয়োজন। সুতরাং দেহ-শক্তির যে শতকরা ৭৫ ভাগ তাপে পরিণত হয় তাহাকে কোন ক্রমে অপব্যয় বলা চলে না। কিন্তু বাষ্প-যন্ত্রে সেই ৮৮ ভাগের সত্যই অপব্যয় হয়।

 আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি শারীরিক উষ্ণতাকে নির্দ্দিষ্ট রাখা এক শ্রেণীর প্রাণীর প্রধান ধর্ম্ম। মানুষ এই শ্রেণীরই অন্তর্গত। অতি গরমে মানবদেহের সেই সাড়ে আটানব্বই ডিগ্রি উষ্ণতার কখনই পরিবর্ত্তন হয় না। যে প্রক্রিয়ায় দৈহিক উষ্ণতা এই প্রকার চিরনির্দ্দিষ্ট থাকে, আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ তাহারো সন্ধান পাইয়াছেন। ইঁহারা এই ব্যাপারটির ব্যাখ্যানে বলেন, উন্নত প্রাণীর দেহকে যে স্নায়ুমণ্ডলী (Nervous System) আচ্ছন্ন করিয়া আছে, তাহাই দৈহিক উষ্ণতাকে স্থির রাখে। মনে করা যাউক, যেন কোন স্তন্যপায়ী প্রাণী বা মানুষকে বরফ-গলা জলে ডুবাইয়া তাহার তাপ হরণ করা যাইতেছে। কিয়ৎকালের জন্য তাহার দেহের তাপ অবশ্যই কমিয়া আসিবে কিন্তু শেষে দেখা যাইবে, বরফ-জল স্থায়িভাবে দেহভাগকে কমাইতে পারিতেছে না। জল যেমন তাপ হরণ করিতেছে, তেমনি কোথা হইতে নূতন তাপ আসিয়া ক্ষয়ের পূরণ করিতেছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ এই অদ্ভুত ব্যাপারের ব্যাখ্যানে বলিতেছেন, গাত্রের উষ্ণতা কমিবামাত্র সর্ব্বাঙ্গের স্নায়ুজাল তাপ-হরণ-সংবাদ স্নায়ুকেন্দ্রগুলিতে পৌঁছাইয়া দেয়। স্নায়ুকেন্দ্র এই দুঃসংবাদে নিশ্চিন্ত থাকিতে পারে না; সর্ব্বাঙ্গের পেশীগুলি য়াহাতে সঙ্কুচিত হইয়া যথাবিধি তাপ উৎপন্ন করে, তাহার জন্য সমগ্র দেহে উত্তেজনা প্রেরণ করে। স্নায়ুর আদেশকে