পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৬
প্রাকৃতিকী

 প্রথমে উদ্ভিদের বিষের কথাই আলোচনা করা যাউক। খেজুর বা কুলের কাঁটা গায়ে লাগিলে আমরা বেদনা পাই, কিন্তু সে বেদনা স্থায়ী হয় না। বিছুটি বা আল্‌কুশীর সুঁয়ো গায়ে ঠেকিলে যে জ্বালা-যন্ত্রণা হয়, তাহা সত্যই বিষের জ্বালা। উদ্ভিদের বিষের ইহা একটি সুপরিচিত উদাহরণ। ছোটখাটো অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়া পরীক্ষা করিলে বিছুটির সুঁয়োকে নিরেট্ দেখায় না। এগুলির আগাগোড়া নলের মত ফাঁপা। ভাল করিয়া পরীক্ষা করিলে এই শূন্যস্থানে এক প্রকার জলবৎ স্বচ্ছ রসও দেখা যায়। এই রসই বিছুটির বিষ। নলাকার সুঁয়োগুলি প্রাণীর দেহে প্রবিষ্ট হইলে, আপনা হইতেই ভাঙ্গিয়া যায়, এবং নলের ভিতরকার রস শরীরে প্রবেশ করিয়া বিষের কার্য্য দেখাইতে আরম্ভ করে। বিছুটির বিষ লইয়া বৈজ্ঞানিকগণ অনেক পরীক্ষা করিতেছেন। পিপীলিকার বিষে যে ফরমিক্‌ এসিড্ (Formic Acid) নামক দ্রাবক মিশানো থাকে, বিছুটির রসের অধিকাংশই সেই দ্রাবকে গঠিত। তা’ ছাড়া সাপের বিষের মত এক প্রকার রসও অল্পমাত্রায় উহাতে মিশ্রিত দেখা যায়। বিছুটির জ্বালাপোড়ার কারণ এই বিষ। সুতরাং অচল উদ্ভিদ্‌কে যদি সচল সাপের সহিত তুলনা করা যায়, তাহাতে অন্যায় হয় না।

 আলকুশীর সুঁয়োর বিষ আরো ভয়ানক। বিষের পরিমাণ ইহাতে বিছুটির তুলনায় অধিক। মানুষ বা গোরু প্রভৃতি প্রাণীর দেহে আল্‌কুশী লাগিলে আর নিস্তার নাই। অধিক পরিমাণে সুঁয়ো গায়ে লাগিলে মৃত্যু পর্য্যন্ত ঘটিতে পারে।

 ফুলের উগ্র গন্ধ নির্গত করিয়াও কতকগুলি উদ্ভিদ্‌কে আত্মরক্ষা করিতে দেখা গিয়াছে। প্রকৃতি যে-সকল বেশভূষায় সাজাইয়া প্রাণী ও উদ্ভিদ্‌কে পৃথিবীতে ছাড়িয়া দেন, কেবল স্বভাবের সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি করাই তাহার উদ্দেশ্য নয়, পত্রপুষ্পের বিচিত্র বর্ণ এবং তাহাদের