পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃত্যুর নবরূপ
১৭৭

হইলেও, তাহা কখনই মানুষের জীবনের লক্ষ্য নয়। মানুষ যে উচ্চ বুদ্ধির অধিকারী হইয়া জন্মগ্রহণ করে, বংশরক্ষার জন্য তাহার প্রয়োজন অতি অল্প। কাজেই প্রকৃতিদেবী নিজের হাতে যে অমূল্য শক্তিটুকু মানুষের দেহে যোজনা করিয়া রাখিয়াছেন, অপর প্রয়োজন-সিদ্ধির জন্য তাহার ব্যবহার আছে বলিয়া স্বীকার করিতেই হয়। যাহা হউক এই কঠিন দার্শনিক ব্যাপারে প্রবেশ করা বর্ত্তমান প্রবন্ধলেখকের অধিকার বহির্ভূত। আমাদের আলোচ্য বিষয় হইতেছে,—মৃত্যু। মৃত্যুর ন্যায় কঠোর সত্য বোধ হয় জগতে আর দ্বিতীয় নাই।

 পৃথিবীর সকল প্রাণীই মানুষের মত জটিল ইন্দ্রিয়সম্পন্ন হইয়া জন্মে না। যাহাদের চক্ষু কর্ণ নাসিকা জিহ্বা কিছুই নাই, এপ্রকার প্রাণীর সংখ্যা ভূমণ্ডলে বড় অল্প নয়। ইহারা অচেতন জড়কণার ন্য়ায় জলে বা স্থলে অবস্থান করে, কোন খাদ্যদ্রব্য গায়ে ঠেকিলে তাহার সারভাগ শোষণ করিয়া দেহের পুষ্টিসাধন করে। ইহাদের মধ্যে স্ত্রীপুরুষ-ভেদও দেখা যায় না, নিজেদের দেহগুলিকে খণ্ডিত করিয়া বংশবিস্তার করাই ইহাদের ক্ষুদ্র জীবনের সার্থকতা বলিয়া মনে হয়। এই সকল প্রাথমিক প্রাণীর মৃত্যু পরীক্ষা করিলে দেখা যায়, মৃত্যুটা অতি সোজা ব্যাপার, তাহাতে জটিলতার লেশমাত্র বর্ত্তমান নাই। ঘুতে উত্তাপ দিলে তাহা যেমন গলিয়া তরলাকার প্রাপ্ত হয়, ইহাদের মৃত্যুও যেন সেইপ্রকার। জীবনের কার্য্য শেষ হইলে তাহাদের দেহ অতি ধীরে ধীরে বিশ্লিষ্ট হইয়া পড়ে, —পঞ্চভূতে গড়া জিনিষ আবার পঞ্চভূতে মিশিয়া যায়। উচ্চপ্রাণীদের দেহের গঠন যেমন জটিল, তাহাদের মৃত্যুও তেমনি আকস্মিক ও ভয়ানক। ষ্টীম এঞ্জিনের মত একটা জটিল যন্ত্রের কোন কল-কব্জা খারাপ হইলে তাহা কতই বিকৃত স্বরে আর্ত্তনাদ করে এবং শেষে হঠাৎ তাহার ক্রিয়া বন্ধ হইয়া যায়, কিন্তু ঢেঁকির মত কোন সরল যন্ত্রের বিকলতায় এত আর্ত্তনাদ, এত ঝনঝনানি এত ফোঁস‍্ফাঁস্ শব্দ