পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃত্যুর নবরূপ

মাংসখণ্ড জীবিত পশু-প্রভৃতির ক্ষত স্থানে জোড় লাগাইতেও কৃতকার্য্য হইয়াছিলেন। এই অত্যাশ্চর্য্য পরীক্ষার ফলে বৈজ্ঞানিকমণ্ডলী বুঝিয়াছিলেন, যে দেহটিকে আমরা মৃত বলি তাহার অংশবিশেষ মৃত্যুর ভান করিয়া কিছুক্ষণ জীবিত থাকে। ইহারা মৃতদেহের এই জীবনকে “Intra-cellular Life” অর্থাৎ কৌষের জীবন নামে আখ্যাত করিয়াছিলেন। এই আবিষ্কার খুবই বিস্ময়কর, কিন্তু সম্প্রতি ডাক্তায় ক্যারেল্ তাঁহার যে নবাবিষ্কারের বিধরণ দিয়াছেন তাহা আরও বিস্ময়জনক। ইনি দেখিয়াছেন, দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইলে যে, কেবল মাংসপিণ্ডই জীবিত থাকে তাহা নয়; হৃৎপিণ্ড প্রভৃতি বিশেষ বিশেষ যন্ত্রগুলিকেও দেহ হইতে ছিন্ন করিলেও সেগুলিকে জীবিত রাখা যায় এবং দেহে সংযুক্ত থাকিলে তাহারা যে-সকল কার্য্য চালাইত, এই অবস্থায় তাহারা অবিকল সেই সকল কার্য্য চালায়। প্রাণীর হৃৎপিণ্ড তালে তালে সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হইয়া দেহে রক্ত সঞ্চার করে; ফুস‍্ফুস্ বায়ু হইতে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং বিষময় অঙ্গারক বাষ্প দেহচ্যুত করে; পাকাশয়ের যন্ত্রগুলি খাদ্যের সার অংশ গ্রহণ করে এবং ইহা হইতে রক্তকণিকা প্রস্তুত করে। আশ্চর্য্যের বিষয়, এই সকল শারীরযন্ত্রগুলিকে দেহ হইতে ছিন্ন করিয়া সাবধানে রাখিলে সেগুলি জীবিত থাকিয়া নিজেদের নির্দ্দিষ্ট কার্য্যগুলিও দেখায়। কাজেই স্বীকার করিতে হইতেছে, দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সেগুলি জীবনের কার্য্য দেখাইতে থাকে।

 এ পর্য্যন্ত জগতে যত বৃহৎ আবিষ্কার হইয়াছে, তাহাদের ইতিহাস অনুসন্ধান করিলে দেখা যায়, আবিষ্কারকগণ এক একটা অবান্তর ব্যাপারে তাঁহাদের আবিষ্কারগুলির আভাস পাইয়া পরে কঠোর সাধনায় সে গুলির প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। ক্যারেল্ সাহেবও এই আবিষ্কারের আভাস একটা অবান্তর ব্যাপারে দেখিয়াছিলেন।