পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রাকৃতিকী

রেডিয়ম্ কয়েক সহস্র বৎসরের মধ্যেই বিকার প্রাপ্ত হইয়া পদার্থান্তরে পরিণত হয়। অর্থাৎ কয়েক রতি ইউরেনিয়ম্ ধাতুকে কোন পাত্রে রাখিয়া যদি ত্রিশ কোটি বৎসর প্রতীক্ষা করা হয়, তবে ঐ দীর্ঘকালের শেষে পাত্রে আর ইউরেনিয়মের সন্ধান পাওয়া যাইবে না; উহার দেহনির্গত তেজ অর্থাৎ ইলেক্ট্রন হইতে যে সকল অপর পদার্থের উৎপত্তি হইবে, তাহারাই পাত্রটিকে পূর্ণ করিয়া রাখিবে। সীসকের (Lead) গুরুত্ব স্বর্ণ ও রৌপ্য প্রভৃতি ধাতুর তুলনায় অনেক কম, সুতরাং কালক্রমে ক্ষয় দ্বারা সীসকের স্বর্ণে পরিবর্ত্তিত হওয়া বিচিত্র নয়। কোন ভবিষ্যদ্দর্শী ব্যক্তি তাঁহার লোহার বাক্সে সীসা বোঝাই করিয়া যদি সুবর্ণপ্রাপ্তির আশায় প্রতীক্ষা করেন, তবে অবৈজ্ঞানিকদিগের নিকট লাঞ্ছিত হইলেও বৈজ্ঞানিক সমাজে এখন তাঁহার সমাদর লাভের সম্ভাবনা আছে।

 এই সকল দেখিয়া শুনিয়া পদার্থতত্ত্ববিদ্‌গণ বলিতেছেন, এই যে নদীসমুদ্রপ্রাণিউদ্ভিদ্‌ময় জগৎ দেখিতেছ, ইহা মূলে কিছুই নয়। জড় বলিয়া কোন জিনিষই বিশ্বে নাই। জড়ের সূক্ষ্মতম কণা অর্থাৎ পরমাণুকে ভাঙ্গিয়া হাজারটি বা ততোধিক সূক্ষ্মতর অংশে ভাগ কর, দেখিবে, এই সুক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণাগুলি সেই ইলেক্ট্রনের মূর্ত্তি গ্রহণ করিয়াছে। আবার ইলেক্ট্রনগুলি খাঁটি বিদ্যুতের কণিকা ব্যতীত আর কিছুই নয়। কাজেই বলিতে হইতেছে, এই ব্রহ্মাণ্ড এক বিদ্যুতেরই রূপান্তর। অর্থাৎ জগতে জড় নাই, এক শক্তিকে লইয়াই বিশ্ব।

 ক্রুক্‌স্ সাহেব গত শতাব্দীর শেষে যে স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন, তাহা সফল হইয়াছে। পদার্থতত্ত্ববিদগণ এখন স্বপ্নে জড়ের শক্তিমূর্তি দেখিতেছেন; স্বপ্ন সাফল্যের দিকেই অগ্রসর হইতেছে। শতাব্দীর শেষে এই সকল স্বপ্নের স্থানে কোন স্বপ্ন আসিয়া বিশ্বের কোন মূর্ত্তি সম্মুখে ধরিবে, তাহা কেবল বিশ্বনাথই জানেন।