পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চা-পান
২০৭

যাইবে। এই কারণে ৬০ ডিগ্রী উত্তপ্ত লৌহপিণ্ড অপেক্ষা সেই প্রকার উষ্ণ জলে অধিক তাপ গুপ্তাবস্থায় থাকিয়া যায়। কাজেই আমরা যখন চায়ের সহিত বা চা-বর্জ্জিত গরম জল পান করি, তখন সেই জলের সহিত অনেকটা তাপ শরীরে প্রবেশ করাই। সুতরাং হঠাৎ এই তাপ হৃদপিণ্ড প্রভৃতি শারীরযন্ত্রের নিকটে পৌঁছিয়া যে তাহার নিজের ক্রিয়া দেখাইতে থাকিবে তাহাতে আর আশ্চর্য্য কি? পাক-যন্ত্রের এবং স্নায়ুমণ্ডলীর উপরে গরম জলের যথেষ্ট প্রভাব আছে। অনেক স্নায়বিক পীড়ায় এক প্রকার গরম জলের চিকিৎসাও প্রচলিত রহিয়াছে; এই নূতন চিকিৎসায় অনেক রোগী সুস্থ হইয়া থাকেন; সুতরাং গরম জল পানে আমাদের দেহটিকে একটু উত্তেজিত করিবার ইচ্ছাটাই তলে তলে কাজ করিয়া আমাদিগকে গরম চা’য়ের দিকে আকর্ষণ করে, এই কথাটা নিতান্ত অযৌক্তিক নয়।

 যে সকল রোগে চা-পান নিষিদ্ধ, তাহাদের চিকিৎসায় ডাক্তারেরা চা-পানের পরিবর্ত্তে গরম জল পানের ব্যবস্থা দিয়া থাকেন। রোগী এই ব্যবস্থা-অনুসারে চলিয়া চা-পানের দুর্লভ আনন্দটুকু হইতে একেবারে বঞ্চিত হয় না।

 এই সকল কথা স্মরণ করিলে মনে হয়, চা-পায়ীদের মধ্যে সত্যই বারো আনা লোক অজ্ঞাতসারে গরম জলটুকুরই গুণে মুগ্ধ হইয়া চায়ের পেয়ালার দিকে আকৃষ্ট হন। গরম জলপান সহ্য করিতে পারেন না, অথচ চা-পান করেন, এ প্রকার অনেক লোক দেখা যায়। ইহাদের চা-পান শিশুদের কুইনিন সেবনের ন্যায়। কুইনিনের তিক্ত বটিকার উপরে চিনির পলস্তরা থাকিলে শিশু ঔষধ সেবনে আপত্তি করে না, হয় ত শেষে আগ্রহের সহিত কুইনিনের বড়ি চাহিয়া ভক্ষণ করে। ইহারাও সেই প্রকার স্বাদ-গন্ধবর্জ্জিত গরমজল পান করিতে না পারিয়া তাহার সহিত দুগ্ধ, চিনি ও চায়ের