পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৬
প্রাকৃতিকী

হইয়া আমাদের পৃথিবী যখন মূর্ত্তি গ্রহণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিল, তখন ভূপৃষ্ঠ অত্যুষ্ণ দ্রব পদার্থে আচ্ছন্ন ছিল, এবং ইহার উপরে আবার আবর্ত্তনবেগটাও অত্যন্ত অধিক ছিল; সুতরাং অনুমান করিতে পারা যায় যে, পৃথিবীর নিরক্ষ-বৃত্তের (Equator) চারিদিকে দ্রব পদার্থগুলি একত্র হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। এই অনুমান যে যথার্থ, পৃথিবীর বর্ত্তমান আকৃতি হইতে তাহা সুস্পষ্ট বুঝা যায়; আবর্ত্তনবেগের প্রাবল্যে যে-সকল দ্রব পদার্থ নিরক্ষ-প্রদেশে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল, কালক্রমে তাহাই জমাট বাঁধিয়া এখন নিরক্ষ-প্রদেশকে মেরুপ্রদেশের তুলনায় কিঞ্চিৎ স্ফীত করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু শিশু পৃথিবীর প্রবল আবর্ত্তন-বেগ কেবল মেরুপ্রদেশকে কিছু চাপা করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই; নানা বায়বীয় পদার্থে পূর্ণ পৃথিবীর আকাশের উপরেও উহার কার্য্য ছিল বলিয়া মনে হয়। আকাশের বায়ব-পদার্থগুলি আবর্ত্তনের বেগে নিরক্ষ-প্রদেশের উপরকার আকাশে সঞ্চিত হইয়া সম্ভবতঃ পৃথিবীর বায়ব-আবরণের গভীরতা বৃদ্ধি করিত। বাষ্পাবরণ যেখানে গভীর তথাকার উষ্ণ দ্রব্য সহজে শীতল হইতে চাহে না; অগভীর আবরণের ভিতরকার জিনিষই তাপ ত্যাগ করিয়া অল্প সময়ে শীতল হইয়া পড়ে। নিরক্ষ-প্রদেশের উপরকার আকাশে অধিক বায়বীয় পদার্থ সঞ্চিত হইয়া পড়ায়, পৃথিবীর মেরুপ্রদেশের বাষ্পাবরণের গভীরতা নিশ্চয় কমিয়া আসিয়াছিল এবং ইহাতে নিরক্ষপ্রদেশের তুলনায় মেরুপ্রদেশের দ্রব পদার্থগুলি শীতলতর হইয়াছিল। জল গরম করিতে গেলে যেমন পাত্রের নিম্নের জল অগ্নির তাপে স্ফীত হইয়া উপরে উঠে এবং উপরকার শীতল জল নীচে নামিয়া পাত্রে এক প্রকার প্রবাহের উৎপত্তি করে, পৃথিবীর নিরক্ষ-প্রদেশের উষ্ণ দ্রব পদার্থ এবং মেরুপ্রদেশের অপেক্ষাকৃত শীতল তরলপদার্থ, এই দুইটির মধ্যে সম্ভবতঃ এই প্রকারেরই প্রবাহ দীর্ঘকাল ব্যাপিয়া চলিয়াছিল।