পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পৃথিবীর শৈশব
২২৭

বলা বাহুল্য, এই প্রবাহ পৃথিবীর তাপক্ষয়ের বিশেষ সহায় হইত এবং আকাশের স্থান বিশেষে সঞ্চিত গভীর বাষ্পরাশি, অগভীর আকাশের দিকে ছুটাছুটি করিয়াও পৃথিবীর তাপ হরণ করিত।

 ভুপৃষ্ঠের দ্রবপদার্থের স্তূপে এবং আকাশের ঘন বাষ্পরাশিতে পূর্ব্বোক্ত প্রবাহ কত কাল চলিয়াছিল, তাহা অনুমান করাও কঠিন, কিন্তু ইহার পরেই যে, অত্যুষ্ণ দ্রবপদার্থের স্থানে স্থানে ভাসমান কঠিন পদার্থ দেখা দিতে আরম্ভ করিয়াছিল, তাহা নিশ্চিত। এই সময়কেই পৃথিবীর স্থলসংস্থানের প্রারম্ভ বলিতে হয়। এখন আমাদের মহাসমুদ্রগুলি যেমন জলে আবৃত রহিয়াছে, প্রাচীনকালে সমগ্র ভূপৃষ্ঠ সেই প্রকার এক দ্রবপদার্থে আবৃত ছিল বটে, কিন্তু এই দ্রবপদার্থের ঘনতা সকল স্থানে সমান ছিল না। যেখানে অধিক তাপ সেখানে তাহা খুবই তরলাকারে থাকিত, এবং যেখানে অল্প উত্তাপ তথায় উহাই হয় ত জমিয়া দ্বীপের সৃষ্টি করিত।

 সূর্য্য বহু দূরে অবস্থান করিয়াও পৃথিবীর উপরে প্রভুত্ব প্রকাশ করিতে ক্ষান্ত হয় না। এখন ধরাপৃষ্ঠ শীতল হইয়া কঠিন মৃত্তিকা ও শিলায় পরিণত হইয়াছে, কাজেই সূর্য্যের টানে ভূপৃষ্ঠের কোন প্রত্যক্ষ পরিবর্ত্তন দেখা যায় না, কিন্তু সমুদ্র-জলের উপরে ঐ টানের প্রভাব প্রতিদিনই দেখা যায়। আধুনিক সমুদ্রের জল টানিয়া সূর্য্য যে-সকল প্রবল জলোচ্ছ্বাস উৎপন্ন করে তাহার শক্তি নিতান্ত অল্প নহে, প্রাচীনকালে যথন দ্রবধাতুময় সমুদ্র ব্যতীত ভুপৃষ্ঠে আর কিছুই ছিল না, সেই সময়ে সূর্য্যের আকর্ষণ-জনিত জোয়ার-ভাঁটা যে কত প্রবল বেগে চলিত তাহা আমরা অনুমান করিতে পারি। তখন পৃথিবীর কেন্দ্র স্থানটিও হয়ত সম্পূর্ণ কঠিনাকার প্রাপ্ত হয় নাই, কাজেই সূর্য্যের জোয়ারের টান ভুগর্ভের গভীরতম অংশ পর্য্যন্ত পৌঁছিত। পৃথিবীর উপগ্রহ চন্দ্র বয়সে পৃথিবী অপেক্ষা অনেক