পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬০
প্রাকৃতিকী

কোন কারণে যদি সে তাহার কক্ষা হইতে একটু বিচলিত হয়, তাহা হইলে আর রক্ষা নাই! এই যে, একটু অকল্যাণ হইল, তাহা কালে কালে বৃদ্ধি পাইয়া এক সময়ে এমন হইয়া দাঁড়াইবে যে, তখন আর পৃথিবীর নিস্তার থাকিবে না; অল্পায়ুঃ ভ্রাতৃগণের ন্যায় তাহাকেও সূর্য্যের গ্রাসে পড়িতে হইবে।

 পূর্ব্বোক্ত প্রকারে আমাদের সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহগণের ধ্বংসের সম্ভাবনা আছে কি না জানিবার জন্য কৌতূহল হওয়া স্বাভাবিক। পণ্ডিতগণ এই প্রসঙ্গের যে মীমাংসায় উপনীত হইয়াছেন, তাহাতে ধ্বংসের সম্ভাবনাই দেখা যায়। জর্জ্জ ডারুইন্ যখন সূর্য্য এবং বৃহস্পতি বা অপর কোন জ্যোতিষ্কের অস্তিত্ব স্বীকার করিয়া গণনা করিয়াছিলেন, তখন নবাগত উল্কাপিণ্ডদিগকে গুরুত্বহীন বলিয়াই ধরিয়াছিলেন এবং আরও স্বীকার করিয়াছিলেন যে, মহাকাশে পরিভ্রমণকলে তাহারা বাহির হইতে কোন প্রকার বাধা প্রাপ্ত হয় না। বলা বাহুল্য, হিসাবের জটিলতা-বর্জ্জনের জন্যই তিনি এই প্রকার স্বীকার করিয়া লইয়াছিলেন। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপারের কথা মনে করিলে বুঝা যায়, উল্কাপিওগুলি আকারে যতই ক্ষুদ্র হউক না কেন, তাহাদের ভার আছে এবং ভ্রমণপথেও তাহারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। কাজেই আমাদের গ্রহ-উপগ্রহগণ এখন যে কক্ষায় সূর্য্য প্রদক্ষিণ করিতেছে, তাহা হইতে কালক্রমে উহাদিগকে অত্যল্প বিচলিত হইতেই হইবে এবং বিচলিত হইলে নিশ্চয়ই ধ্বংসমুখে পড়িতে হইবে। কাজেই দেখা যাইতেছে, গ্রহ-উপগ্রহের মৃত্যুবীজ তাহাদের সঙ্গেই আছে। কিন্তু এই অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুভয়ে মানবজাতির বিচলিত হইবার কারণ নাই। আমাদের গ্রহ-উপগ্রহগণের মৃত্যুর আরও শত শত বীজ প্রোথিত হইয়াছে এবং সেগুলি অঙ্কুরিত হইতেও আরম্ভ করিয়াছে, স্বাভাবিক মৃত্যুর অনেক পূর্ব্বে এগুলির কুফলেই সৃষ্টিলোপের সম্ভাবনা আছে।