পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শুক্র-ভ্রমণ
২৮৭

চন্দ্র অস্তে গিয়াছে, পৃথিবী তখনও দিগন্তপ্রান্তে স্নিগ্ধোজ্জ্বল শেষ কিরণ বর্ষণ করিয়া অস্ত গমনোন্মুখ—বন্ধু এই দৃশ্যে যে কত বড় কবিত্ব আবিষ্কার করিয়াছিলেন জানি না, তবে ইহার মধ্যে তিনি যে একটু কিছু সূক্ষ্ম দেখিতেছিলেন, তাঁহার অচটুল নয়নযুগল ও স্থিরমূর্ত্তিতে, তাহা বেশী প্রতিভাত হইতেছিল। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নক্ষত্র গ্রহাদির অস্তদৃশ্য শুক্রগ্রহে বাস্তবিকই এক নূতন ঘটনা। পৃথিবীর আকাশ সর্ব্বদা জলীয় বাষ্পে পূর্ণ থাকায়, ক্ষুদ্র জ্যোতিষ্কগণ দিগন্তবর্ত্তী হইবামাত্রই বাষ্পাবরণে অদৃশ্য হইয়া যায়, ইহাদের ক্ষীণ জ্যোতি বাষ্পরাশি ভেদ করিয়া ধরা-পৃষ্ঠে পৌঁছিতে পারে না; কিন্তু শুক্রের অন্ধকার-অংশে কোন সময়েই সূর্য্য উদিত হয় না, এজন্য তাপাভাবে জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হইতে না পারায় আকাশ পরিচ্ছন্ন থাকে ও প্রত্যেক ক্ষুদ্র নক্ষত্রটিও মানব-চক্ষে দীপ্তিশালী দেখায়। এই ভয়ানক শীতে, শুক্র-পৃষ্ঠে বরফতুষারাদি অভাবের কারণ বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করায়, ইহাও সৌরতাপাভাবের কারণ বলিয়া স্থির করিলেন; কথাটা প্রকৃত বলিয়াই বোধ হইল; সূর্য্যকিরণাভাবে শুক্রগর্ভনিহিত জলরাশি বাষ্পে পরিণত হইতে পারে না—কাযেই মেঘ বৃষ্টি, নদী তুষারাদি উৎপন্ন হওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব।

 অসভ্য শুক্রবাসিগণের আতিথ্য গ্রহণ করিয়া আমরা অনেক কাল গুহাবাস করিলাম। শুক্রগ্রহে সময়নিরূপণ ব্যাপারটা বড় কঠিন, আমাদের রাত্রিদিনের মত ইহাতে একটা বড় সময়বিভাগের কোন উপায়ই নাই। আমার পকেটে একটি ঘড়ি ছিল, তাহাতে কেবল বার ঘণ্টার হিসাব চলিত, তাহার পর সকলই গোলযোগ হইয়া যাইত। একই অংশ সূর্য্যালোকে উন্মুক্ত রাখিয়া আমাদের ২২৪ দিন ১৮ ঘণ্টায়, শুক্র সূর্য্যপ্রদক্ষিণ করে জানিতাম, কাযেই পৃথিবী স্বীয় কক্ষপ্রদক্ষিণ-কালে অর্থাৎ এক বৎসর পরে, যে-সকল জ্যোতিষ্কগণের উদয়াস্ত