পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ডপ্‌লার সাহেবের সিদ্ধান্ত
৬৫

 পাঠক অবশ্যই অবগত আছেন, আমরা যাহাকে আলোক বলি, তাহা সর্ব্বব্যাপী ঈথর নামক এক পদার্থের তরঙ্গ হইতে নাকি উৎপন্ন। ঈথরকে দেখা যায় না, কিন্তু সর্ব্বস্থানে অবস্থান করে। বায়ু কেবল পৃথিবীর উপরেই আছে,—পঞ্চাশ ষাটি মাইল উপরে উঠিলে আর বায়ুর অস্তিত্ব থাকে না। কিন্তু ঈথর জিনিষটা সে প্রকার নয়, ইহা সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডকে জুড়িয়া আছে। বায়ুতে বা জলের কোন স্থানে একটু আলোড়ন উপস্থিত হইলে যেমন তরঙ্গাকারে সেই আলোড়ন চারিদিকে ছুটিয়া চলে, ঈথরেও তাহাই হয়। কোটি কোটি মাইল দূরের জ্যোতিষ্কে অগ্নি প্রজ্বলিত হইলে ঈথরের যে আলোড়ন উপস্থিত হয়, তাহা তরঙ্গ পরম্পরায় আসিয়া আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়ে ধাক্কা দেয়, এবং এই ধাক্কাতেই আমরা আলোককে দেখিতে পাই। শব্দ বা ধ্বনির বৈচিত্র্য বায়ুর তরঙ্গের সংখ্যার উপর নির্ভয় করে। আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি সেকেণ্ডে বারো শত বার বায়ুতরঙ্গের আঘাত পাইলে আমরা যে শব্দ শুনি, দুই হাজার বারের আঘাতে শব্দ তাহা অপেক্ষা অনেক মিহি হইয়া দাঁড়ায়। বায়ু-তরঙ্গের সহিত ঈথর-তরঙ্গের এস্থলেও সাদৃশ্য আছে। সা, রে, গা, মা, ইত্যাদি ধ্বনির মিহি-মোটাভাব যেমন বায়ু-তরঙ্গের সংখ্যার উপর নির্ভর করে, রক্ত, পীত, হরিৎ, নীল ইত্যাদি বর্ণের বৈচিত্র্যও ঠিক্ সেই প্রকারে ঈথর তরঙ্গের সংখ্যার উপর নির্ভর করে। যতগুলি ঈথরতরঙ্গ চক্ষে ধাক্কা দিয়া পীতালোক উৎপন্ন করিতেছে, তাহার সংখ্যা বাড়াইয়া দাও; দেখিবে, এখন তাহাতে আর পীতালোক উৎপন্ন হইতেছে না, পীতালোক হইতে উচ্চ কোনও বর্ণ, হয় ত সবুজ বা নীল ইত্যাদি কিছু প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে। ঈথর-তরঙ্গের সংখ্যা কমাইয়া দাও, দেখিবে এখানে কোনও নীচু রঙ্ অর্থাৎ কমলা (Orange) বা লোহিত, এই প্রকার কিছু প্রকাশ হইয়া পড়িতেছে। সা, রে, গা, মা, ইত্যাদি ধ্বনি যেমন বায়ু-তরঙ্গের সংখ্যার ক্রমিক বৃদ্ধি দ্বারা উৎপন্ন