পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
প্রাকৃতিকী

হয়, লোহিত, গোলাপী, পীত, সবুজ, নীল প্রভৃতি রামধনুর বিবিধ বর্ণও সেই প্রকার ঈথর-তরঙ্গের ধাক্কার সংখ্যা বৃদ্ধি দ্বারা আমাদের চক্ষুতে প্রকাশ পাইয়া থাকে।

 পাঠক রশ্মিনির্ব্বাচন যন্ত্রের কথা হয় ত শুনিয়াছেন। এই যন্ত্রটার নাম যতটা বড়, মূল জিনিষটা কিন্তু তত বড় নয়। একটা তে-শিরা কাচ লইয়াই যন্ত্র গঠিত। সাধারণ সূর্য্যালোক যেমন এই প্রকার কাচের ভিতর দিয়া বাহিরে আসিলে, লাল, গোলাপী, পীত, ইত্যাদি বর্ণের এক বর্ণচ্ছত্র (Spectrum) প্রস্তুত করে, নক্ষত্রের আলোকও সেই প্রকার মৌলিক বর্ণে বিশ্লিষ্ট হইয়া এক-একটি বর্ণচ্ছত্র প্রস্তুত করে। কঠিন তরল বা অধিক চাপপ্রাপ্ত বাষ্প পুড়িয়া যে-সকল বর্ণচ্ছত্র উৎপন্ন করে, সেগুলি সূর্য্যের বর্ণচ্ছত্রের ন্যায় অখণ্ড। অর্থাৎ এ গুলিতে লাল, গোলাপী, হলুদ, সবুজ ইত্যাদি বর্ণ একবারে গায়ে গায়ে লাগা থাকে। কিন্তু সাধারণ বাষ্প পুড়িবার সময় যে বর্ণচ্ছত্র উৎপন্ন করে, তাহা খণ্ডিত হইয়া প্রকাশ পায়। অর্থাৎ ইহাতে সকল রঙ্‌গুলি গায়ে গায়ে লাগা থাকে না। হাইড্রোজেন্ পোড়াইলে যে বর্ণচ্ছত্র পাওয়া যায়, তাহাতে গোলাপী সবুজ ও নীলের কয়েকটি রেখা প্রকাশ পায়। যখনই হাইড্রাজেনের আলোককে বিশ্লেষ করা যায়, এই কয়েকটি বর্ণরেখা ব্যতীত আর কিছুই বর্ণচ্ছত্রে প্রকাশ পায় না। সেই প্রকার সোডিয়ম্ পোড়াইলে বর্ণচ্ছত্রের পীতাংশে কয়েকটি রেখা দেখা দেয় মাত্র। প্রত্যেক মূল পদার্থের এই প্রকার এক একটি বিশেষ বর্ণচ্ছত্র নির্দ্দিষ্ট থাকায়, আমরা যখন দূরবর্ত্তী নক্ষত্রের রশ্মি বিশ্লেষ করিয়া বর্ণচ্ছত্র উৎপন্ন করি, তখন পরিজ্ঞাত পদার্থের বর্ণচ্ছত্রের সহিত ইহার মিল দেখিয়া, নক্ষত্রে কোন্ কোন পদার্থ পুড়িতেছে তাহা বলিয়া দিতে পারি। এই কারণে বর্ণচ্ছত্র পরীক্ষা দূরবর্ত্তী জ্যোতিষ্কের গঠনোপাদান নির্ণয়ের একটি প্রধান অবলম্বন হইয়া দাঁড়াইয়াছে।