38 প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান যখন মদিন ছয় বছরের ফুটফুটে মেয়েটি ছিল, দুলালের আঙ্গুল ধরিয়া বেড়াইত—এক দণ্ড দুলালকে ছাড়া থাকিত না—সেই সময় বৈশাখ মাসে একটি বুলবুলীর বাচ্চ তার মায়ের সঙ্গে উড়িতে শিখিতেছে দেখিয়া সে দুলালকে আবদার করিয়া বাচ্চাটি ধরিয়া দিতে বলিল। সেই বাচ্চ ভাল খাচায় পুরিয়া তাহারা দুইজনে এতকাল পালন করিয়াছে । আজ খাচাটা ভাঙ্গা দাওয়ায় পড়িয়া রহিয়াছে। এত সাধের বুলবুলি ঘরের চালার উপর বসিয়া করুণস্বরে চীৎকার করিতেছে। পালিত বিড়ালটি রান্নাঘরের এক কোণে বসিয়া ডাকিতেছে—তথায় কেহ নাই । এই গত জ্যৈষ্ঠ মাসে স্বামী-স্ত্রী দুইজনে মিলিয়া একটা ভাল আমের চারা আঙ্গিনায় পুতিয়াছিল । মদিন রোজ রোজ জল ঢালিয়া সেটিকে বড় করিয়াছিল—“সেইন আমের চারা গরুতে খাইল ।” ہے.ہے ہہے۔عیب صہمی ہمہ ******* এই সকল দেখিয়া উৎকণ্ঠায় দুলালের প্রাণ অস্থির হইয়া উঠিল। সে ‘মদিনা মদিন। বলিয়৷ চীৎকার করিতে লাগিল। হায়রে, যদি মদিনার দেছে একবিন্দু রক্ত থাকিত, প্রাণের একটি স্পন্দন থাকিত—তবে স্বামীর সেই অমৃততুল্য কণ্ঠস্বরের আহবানে সে পুনৰ্জ্জীবন পাইত। কিন্তু তাহার কোন সাড়া নাই । ঘরের এককোণে সুরুজ মরার মত পড়িয়াছিল, বাপজানের ডাক শুনিয়া সে বাহির হইয় আসিল । “দুলাল জিগায়—সুরুজ, মদিন কোথায় ? চোখে হাত দিয়া সুরুজ কবর দেখায়।” দুটি ছত্রে একটি নিদারুণ করুণ ছবি । এক হাত দিয়া সুরুজ চোখের . জল ঢাকিতেছে, অপর হাত দিয়া পিতাকে আঙ্গিনার এক পাশ্বে মাতার কবর দেখাইতেছে । সেই দৃপ্ত দুলাল দেখিতে পারিল না, সহিতে পারিল না।
পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/১৭৩
অবয়ব