বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖԵ প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান কালের আবর্তনে শত শত ব্রাহ্মণ—বৌদ্ধ-শ্রমণ হইয়া গিয়াছেন, কিংবা মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছেন। অহরহঃ হিন্দুগণ মুসলমান অথবা খৃষ্টান হইয়া যাইতেছে। র্যাহাদের পিতৃপিতামহ মন্দিরের দ্বার আগলাইয়া বিগ্রহ রক্ষার জন্ত প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন, তাহাদেরই বংশের দুলালের ইসলাম গ্রহণ করিয়৷ সেই পূৰ্ব্বপুরুষগণের প্রাণাপেক্ষ প্রিয়, বংশ-পরম্পর-পূজিত দেববিগ্ৰহ ভাঙ্গিয়া ফেলিতে দ্বিধাবোধ করে নাই । অনাদিকাল হইতে এদেশের জনসাধারণের মূলতঃ কোন পরিবর্তন হয় নাই । ভাস্কর ও স্থপতি বাটালী-হুস্তে যে তপস্ত করিয়াছে, তাহাতে ভারতবর্ষে কখনও 'তাজমহল'-এর স্বষ্টি হইয়াছে, কখনও বা কোণার্কের অতুলনীয় মন্দির গড়িয়া উঠিয়াছে । ভক্ত তাহার নৃত্য-গীত, অনিদ্রা, উপবাস ও তপস্তার দ্বারা যে সুধা-ভাণ্ডার উন্মুক্ত করিয়াছে,-যুগযুগান্তরের সেই সাধনা হিন্দু-মুসলমান করিয়৷ আসিয়াছে। কত কুরুক্ষেত্র, কত হলদিঘাট, কত পাণিপথ ও পলাশীতে কামান-নিনাদে, অসির ঝনৎকারে দিগন্ত কঁাপিয়া উঠিয়াছে, কিন্তু জনসাধারণের এই তাপসমূৰ্ত্তি বদলায় নাই। এদেশের বৈশিষ্ট্য এই, ইহার নিবৃত্তিমুখী ; অপরাপর বহুদেশ ভোগমুখী। এদেশে আজ যে রাজা, কাল সে রাজদণ্ড ছাড়িয়া ফকিরের কন্থা লইয়াছে, আজ যে দুজ্জয় বীর, কাল সে পীরের দরগা বা মন্দিরের দীনতম সেবক ; এদেশের প্রকৃত রাজ। ফকির ও সাধু। বাহিরে আজ যে হিন্দু, কাল সে মুসলমান,—তাহার বংশধরেরা পরে হয়ত বৈষ্ণব বা খৃষ্টান । এই স্বাধীন চিন্তার যুগে হিন্দু, মুসলমান ও খৃষ্টানবংশীয় লোকদের কেহ কেহ পুনশ্চ চাৰ্ব্বাকের মতাবলম্বী হইবে কিনা কে বলিতে পারে ? যুগে যুগে ধৰ্ম্ম-মত, সাম্প্রদায়িক-স্বার্থ ভিন্ন ভিন্ন দিকে পরিচালিত হইতেছে। সুতরাং সাম্প্রদায়িক পরিচয় আমাদের প্রকৃত পরিচয় নহে, কিন্তু আমরা আদিকাল হইতে যে বাঙ্গালী, সেই বাঙ্গালী আছি এবং এই