প্রাচীন বাঙ্গল সাহিত্যে মুসলমানের অবদান ○○ বৌদ্ধগণের পাণ্ডিত্য সৰ্ব্বত্র বিদিত। তাহার। সংস্কৃত, প্রাকৃত, পালি প্রভৃতি ভাষায় অসাধারণ ব্যুৎপত্তি লাভ করিতেন । ইহাদের মধ্যে র্যাহার মুসলমান হইলেন, তাহার। পূৰ্ব্বোক্ত ভাষাগুলির সঙ্গে আরবী-ফারসাতেও কৃতবিদ্য হইলেন। এই জন্তই দৌলত-কাজি ও আলোয়ালের পাণ্ডিত্য আমাদিগকে বিস্মিত করে। কোন হিন্দু কবির কাব্যে সংস্কৃত ও প্রাকৃতে ব্যুৎপত্তির এতটা পরিচয় নাই, যাহা আমরা আলোয়ালের "পদ্মাবতী’তে পাইয়াছি । তিনি লিখিয়াছেন—মাগন ঠাকুরের “আজ্ঞ। পাইয় রচিলাম গ্রন্থ পদ্মাবতী। যতেক আছিল মোর বুদ্ধির শকতি৷” শুধু বুদ্ধির নহে, এই কাব্যখানিকে বিদ্যার বারিধি বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না। হিন্দুদের ঘরের প্রত্যেকটি উৎসব ও নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপারের বিশ্লেষণ করিয়া তিনি যে সকল বর্ণনা দিয়াছেন, তাহা হিন্দুসমাজের বাহিরের কোন লোক লিখিতে পারেন একথা বিশ্বাসযোগ্য হইত না—যদি না আমরা এই ভাবের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাইতাম । তিনি প্রাকৃত পিঙ্গলের যে সূক্ষ্য বিবৃতি দিয়াছেন, তাহা সেই ভাষার কোন সুপণ্ডিত বৈয়াকরণিকের যোগ্য। তিনি আয়ুৰ্ব্বেদে এতটা অভিজ্ঞতা দেখাইয়াছেন যে, তাহা কোন সাধারণ ভিষগাচাৰ্য্য পারেন কিন সন্দেহ । সমস্ত অলঙ্কার-শাস্ত্র মন্থন করিয়া তিনি নায়িকাদিগের রূপভেদ বর্ণনা করিয়াছেন এবং দুর্গাপূজার এত সুবিস্তৃত উপকরণ ও অনুষ্ঠান-রীতির বিবরণ দিয়াছেন যে, আমরা ত দূরের কথা কোন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত শাস্ত্র না খাটিয়া তাহা বলিতে পারিবেন না। প্রশস্তি-বন্দনার ও অপরাপর উৎসবের অঙ্গীয় অনুষ্ঠানের ও জ্যোতিবিদ্যার বিবৃতি বিস্ময়জনক । ইহাছাড়া তিনি ব্যায়াম, পলোখেলা, অশ্বারোহণের নানা কায়দার কৌতুহলপ্রদ বিবৃতি দিয়া কাব্যখানিকে পাণ্ডিত্যের বিজয়স্তম্ভ স্বরূপ প্রতিপন্ন করিয়াছেন। কোন কোন স্থলে তিনি জয়দেবের গীত-গোবিন্দ” এর সুললিত পদগুলি ধ্বস্তাত্মক মাধুৰ্য্য অবিকৃত রাখিয় বঙ্গানুবাদে পরিণত
পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/৬২
অবয়ব