গোভিল-গৃহ্যসূত্রে (২. ১. ১৯-২০) এবং কাঠক গৃহ্যে নারীদের বেদমন্ত্রে অধিকারের কথা দেখা যায়। নারীরা যে শিক্ষাও দিতেন তাহা বুঝা যায় পাণিনির ‘আচার্যা’ এবং ‘উপাধ্যায়া’ ও ‘উপাধ্যায়ী’ (৩. ৩. ২১) শব্দগুলিতে। এখানে কাশিকাবৃত্তি কথাটা আরও স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন। কাশকৃৎস্নি ছিলেন একজন মীমাংসাচার্য। তাঁহার মীমাংসার নাম কাশকৃৎস্নী (৪.১.৪)। সেই মীমাংসায় ব্যুৎপন্না নারীকে বলে ‘কাশকৃৎস্না’ (৪.১.১৪)। প্রাচীন ব্যাকরণ আপিশল যে নারী শিখিয়াছেন, তিনি ‘আপিশলা’ (৪.১.১৪)। পতঞ্জলি ইহাদের পরিচয় দিয়াছেন। তাহাতে আরও জানিতে পারি যে, অনেক সময় নারীরা নারীগুরুর কাছেই শিক্ষা করিতেন (৪-১.৭৮)। পুরুষদের কাছে পুরুষছাত্রদের সঙ্গেও যে নারীরা অধ্যয়ন করিতেন তাহার কথা আমরা খ্রীস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর লেখক ভবভূতির উত্তররামচরিতে পাই। ভগবান বাল্মীকি যখন লবকুশকে ত্রয়ীবিদ্যা শিখাইতেন তখন নারী আত্রেয়ী সেই সঙ্গে পড়িতেন, তবে মনস্বী লবকুশের শিক্ষার গতিবেগের সঙ্গে তিনি তাল রাখিয়া চলিতে পারিতেছিলেন না (দ্বিতীয় অঙ্ক)। মালতীমাধবেও ভবভূতি দেখাইয়াছেন, নরনারী একত্র আচার্যকুলে পড়িতে পারিতেন। কামন্দকী সেখানে পড়িয়াছেন। ইহার প্রায় একশত বৎসর পূর্বে বাণভট্ট তাঁহার কাদম্বরীতে দেখাইয়াছেন মহাশ্বেতার রূপখানি। ব্রহ্মসূত্রের দ্বারা মহাশ্বেতার কায়া ছিল পবিত্রীকৃত— ব্রহ্মসুত্রেণ পবিত্রীকৃতকায়াম্। কাদম্বরী নির্ণয়সাগর, ১৯১২, পৃ ৪৮২ যাঁহারা দেবীদের পুরাতন মূর্তি দেখিয়াছেন তাঁহারা জানেন বহু দেবীরই উপবীত আছে। দেবীর ধ্যানেও ‘নাগযজ্ঞোপবীতিনীম্’ প্রভৃতি কথা মেলে। মহাভারতে নারীদের বেদপাঠের রীতিমতই উল্লেখ আছে। শিবা নামে বেদপারগা সিদ্ধা ব্রাহ্মণী সর্ববেদ অধ্যয়ন করিয়া অক্ষয় দেহ লাভ করেন—
অত্র সিদ্ধা শিবা নাম ব্রাহ্মণী বেদপারগা।
অধীত্য সাখিলান্ বেদান্ লেভে স্বং দেহমক্ষয়ম্॥ উদ্যোগ, ১০৯.১৯
ভারতবর্ষ সব সত্যের মূলে দেখিয়াছে ব্রহ্মকে। কাজেই তাঁহাদের মতে নরনারীর পার্থক্য কেন হইবে। শ্বেতাশ্বতর বলেন, তুমিই স্ত্রী, তুমিই পুরুষ—
ত্বং স্ত্রী ত্বং পুমানসি। ঐ, ৪.৩
স্ত্রী পুরুষ বলিয়া তবে কেন ভেদ হইবে? একই আত্মা যখন যে শরীরে