শতাব্দী পূর্বে সূফী সাধিকা বাউরী সাহিবা দিল্লীপ্রদেশে এক সাধকের ধারা প্রবর্তন করেন। বাল্যকালে আমরা কাশীতে বরুণাসঙ্গমে তপস্বিনী মাতাজীকে দেখিয়াছি। রাধাস্বামী সম্প্রদায়ে মহারাজসাহেব পণ্ডিত ব্রহ্মাশঙ্কর মিশ্রের ভগ্নী মাহেশ্বরী দেবীকে সকলে তপস্বিনী মহারানী বূআজী (পিসিমা) বলিতেন। তিনি কাশীর কন্যা, কাজেই তাঁহার সঙ্গে আমাদের দেখা-শোনা ছিল। পরমহংসদেবের স্ত্রী সারদেশ্বরী দেবী বহু লোককে সাধনা দিয়াছেন। ভারতের বাহিরেও বহু নারী ভক্ত আছেন, তাঁহাদের নাম আর করিলাম না। কাজেই দেখা যাইতেছে, ভারতে চিরদিনই নারীদের প্রতি সর্বসাধারণের চিত্তে একটি শ্রদ্ধার ভাব চলিয়া আসিতেছে। যদি কোনো ব্যবস্থাপক ইহার বিরুদ্ধে কিছু বলিয়াও থাকেন, তবু সাধারণের মধ্যে নারীমাহাত্ম্যের গৌরব তাহাতে ক্ষুণ্ণ হয় নাই। সেই মহাভারতের যুগেও দেখি পরিবারে নারীর বিলক্ষণ সম্মান ছিল (বিরাট ৩-১৭)। তাই যদিও আদিপর্বে (১৫৯-১১) একবার দুহিতাকে ‘কৃচ্ছ’ বলা হইয়াছে তবু পুত্রের চেয়ে কন্যাকে কেহ কম করিয়া দেখেন নাই। ভীষ্ম বলেন, পুত্র তো নিজেরই স্বরূপ, কন্যাও পুত্রেরই সমতুল্য, এই আত্মস্বরূপ ইঁহারা থাকিতে কেন ধন অন্যে পাইবে—
যথৈবাত্মা তথা পুত্রঃ পুত্রেণ দুহিতা সমা।
তামাত্মনি তিষ্ঠন্ত্যাং কথমন্যো ধনং হরেৎ। অনুশাসন ৪৫-১১
কন্যারা যে রীতিমতই উত্তরাধিকারিণী সে কথা ভীষ্ম স্পষ্টাক্ষরেই বলিয়া গেলেন যে, কন্যা থাকিতে অন্যের কোনো অধিকারই নাই।
তাই পুত্রের মত কন্যাদেরও রীতিমত জাতকর্মাদি মহাভারতের যুগে অনুষ্ঠিত হইত (আদি ১৩০-১৮)। সাবিত্রীর জন্মের পরেও জাতিক্রিয়াদি যথাবিধি অনুষ্ঠিত হইয়াছিল (বন ২৯২-২৩)। ভার্যারূপেও নারীরা সেই যুগে যথেষ্ট সম্মান পাইয়াছেন—
অর্ধং ভার্যা মনুষ্যস্য ভার্যা শ্রেষ্ঠতমঃ সখা। ভার্যা মূলং ত্রিবর্গস্য ভার্যা মূলং তরিষ্যতঃ। আদি ৭৪-৪১
ইহার পরও ৪২-৪৭ শ্লোকে এবং ৫১ শ্লোকে ভার্যারই মাহাত্ম্য কীর্তিত। অনুশাসনপর্বে নারীদের স্বাধীনতা সংকোচের কথা বলিয়াও নারীদের যে সৎকার করিতে হইবে ও সর্বক্ষেত্রে তাঁহারাই যে শ্রী, এই কথা বলিতে