বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
প্রাচীন ভারতে নারী

রক্ষার্থ নিজের পুত্র পাপী দুর্যোধনকে তিনি ত্যাগ করিবার জন্য বারবার ধৃতরাষ্ট্রকে ধরিয়াছেন—

তস্মাদয়ং মদ্বচনাৎ ত্যজ্যতাং কুলপাংসনঃ। সভা, ৭৫ ৮

 গান্ধারীর জা’ কুন্তীও বৈদিকমন্ত্রে দীক্ষালাভ করিয়াছিলেন (বন ৩০৪-২০)। তপস্বিনী শাণ্ডিলী ছিলেন মনস্বিনী সর্বজ্ঞা সর্বতত্ত্বজ্ঞা (অনু ১২৩-২)। এক পতিব্রতা নারী সাঙ্গোপনিষৎ অধীতবেদ তপস্বী কৌশিককে সুন্দর ধর্মোপদেশ দিয়াছিলেন (বন ২০৫. ৩৩-৩৮)। তপোবৃদ্ধা অরুন্ধতী বশিষ্ঠের সমানশীলা ও সমানব্রতচারিণী ছিলেন (অনু ১৩০. ২); তাঁহার কাছে পিতৃগণ ও ঋষিগণ ধর্মের গুহ্যতম তত্ত্ব শুনিতে চাহিলেন এবং শুনিয়া ধন্য হইলেন (ঐ ১৩০ অধ্যায়)। তপস্বিনী সুলভার কাছে সর্ববেদবিৎ ব্রহ্মবাদী জনক যে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেন তাহা শান্তিপর্বের ৩২০তম অধ্যায়ে সবিস্তারে বর্ণিত আছে। সেইসব কথা যোগতত্ত্বের সার। জনক তাঁহার স্বাগতার্থ পাদশৌচ করাইয়াছিলেন (৩২০. ১৪)। অনুশাসনপর্বের আরম্ভেই (১-১৭) স্থবিরা শমসংযুতা তাপসী গৌতমীর কথা দেখা যায়। অশ্বমেধপর্বের ব্রাহ্মণী-ব্রাহ্মণসংবাদে (২০-২৫ অধ্যায়) পতিশিষ্যা ব্রাহ্মণীর কথা সকলেই শ্রদ্ধার সহিত গ্রহণ করিয়াছেন।

 নারীগণ জ্ঞানে ধর্মে ও তপস্যায় অধিকারিণী ছিলেন বলিয়া যে সংসারের কাজে তাঁহারা মনোযোগ দিতেন না তাহাও নয়। দ্রৌপদী ধর্মজ্ঞা ও ধর্মদর্শিনী ছিলেন (মহাভারত, শান্তিপর্ব, ১৪-৪)। নীতিশাস্ত্রেও তাঁহার গভীর জ্ঞান ছিল।

 মধ্যযুগের সাধক-সন্তদের মধ্যেও অনেক নারী ছিলেন। ক্ষেমা পদ্মাবত দাদূর কন্যা নানীবাঈ ও মাতাবাঈ সাধনার রাজ্যে প্রখ্যাত। ভক্তিমতী করমা ও মীরাবাঈর কথা তো সর্বজনবিদিত। প্রেমের ও ভক্তির গানে মীরার সমতুল্য কেহ নাই। তারপর প্রায় দুই শত বৎসর পূর্বেকার সহজোবাঈ, দয়াবাঈ প্রভৃতি নারী আছেন। প্রায় একশত বৎসর পূর্বে যোধপুরে তপস্বিনী অজনেশ্বরী, বীকানীরে গৌরাঁজী, জনাবাঈ, মহারাষ্ট্রদেশে কৃষ্ণানদীতটনিবাসিনী সখূবাঈ, পাণ্টরপুরের কান্‌হূ পাত্রা, পুনাতে বাবাজান, মহিশূরে শান্তিবাঈ, মধ্য প্রদেশে মায়াবাঈ, নামদেবের পরিচারিকা প্রভৃতি ছিলেন। কয়েক