কথা হইয়াছিল। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিণীর রূপে মুগ্ধ হইয়া তাঁহাকে হরণ করিয়া বিবাহ করেন। ভীষ্মকের পুত্র রুক্মী আপনার ভগ্নীর এই হরণকে পছন্দ করেন নাই। মহাভারতে আছে—
নাঽমৃষ্যত পুরা যোঽসৌ স্ববাহুবলগর্বিতঃ।
রুক্মিণ্যা হরণং বীরো বাসুদেবেন ধীমতা। উদ্যোগ ১৫৭-১১
হয়তো শ্রীকৃষ্ণের এই মামাতো বোনকে হরণ করিয়া বিবাহ করা রুক্মী সঙ্গত মনে করে নাই। শ্রীকৃষ্ণের এই বিবাহ পরবর্তীকালের কোনো কোনো ধর্মনেতাও পছন্দ করেন নাই। তাই তর্কস্থলে সেইসব পণ্ডিতেরা যুক্তি দেখাইয়াছেন যে, রুক্মিণী ভীষ্মকের ঔরসজাতা না হইতেও পারেন। তাঁহাদের এইরূপ তর্ক পূর্বমীমাংসা-গ্রন্থে আরও আছে। ভীষ্ম যজ্ঞ করিয়াছিলেন, অথচ স্ত্রী-বিনা যজ্ঞ হয় না। তাই তাঁহাদের বলিতে হইল, মহাভারতে লেখা না থাকিলেও ভীষ্ম নিশ্চয় বিবাহ করিয়াছিলেন, নহিলে স্ত্রী-বিনা যজ্ঞ করিবেন কেমন করিয়া? মহাভারতে তো স্পষ্টই দেখি ভীষ্মকের পুত্র রুক্মী (পুজো রুক্মীতি বিশ্রুতঃ। উদ্যোগ ১৫৭, ১-২)। মহাভারত আদিপর্বে আছে রুক্মিণী হইলেন শ্রীর অংশাবতার। তিনি পৃথিবীতে ভীষ্মকের কুলে জন্ম নিলেন—
শ্রিয়স্তুভাগঃ সংজজ্ঞে রত্যর্থং পৃথিবীতলে।
ভীষ্মকস্য কুলে সাধ্বী রুক্মিণী নাম নামতঃ। আদি ৬৭-১৫৬
পদ্মপুরাণের উত্তরখণ্ডেও (৬৭ অধ্যায়) দেখা যায়, ভীষ্মকের পুত্র রুক্মী এবং তাঁর অবরজা (কনিষ্ঠ।) কন্যা রুক্মিণী। এই বিবাহে মহাভারতের সম্মতি যে আছে, তাহা বুঝি পূর্বোক্ত ‘সাধ্বী রুক্মিণী’ এই কথায়। দ্রৌপদী ও শ্রীকৃষ্ণকে বলিয়াছেন, তুমি যেমন ধর্মতঃ রুক্মিণীকে বিবাহ করিয়াছ, আমিও তেমনি অর্জুনের ধর্মপত্নী—
লব্ধাঽহমপি তত্রৈব বসতা সব্যসাচিনা।
যথা ত্বয়া জিতা কৃষ্ণ রুক্মিণী ভীষ্মকাত্মজা। বন ১২-১১৫
এখানে দ্রৌপদীও বলিতেছেন রুক্মিণী ভীষ্মকের আত্মজা, শুধু পালিতা নহেন।
সুভদ্রা ও অর্জুনের বিবাহকথা মহাভারত ছাড়া অন্যান্য গ্রন্থেও আছে। রুক্মিণীর এই বিবাহ রুক্মী যে পছন্দ করেন নাই তাহা পূর্বেই বলা হইয়াছে। শিশুপাল তো পছন্দ করিতেই পারেন না। শিশুপাল সভামধ্যে শ্রীকৃষ্ণকে এই বলিয়াই তিরস্কার করিলেন, “রুক্মিণীর সঙ্গে আমারই পূর্বে বিবাহের কথা