পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদর্শ ও অধিকার
১৯

 শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিণীকে লইয়া শুধু ভোগ-সুখেই রত ছিলেন না। পবিত্র হিমালয়পার্শ্বে শ্রীকৃষ্ণ দ্বাদশ বৎসর মহদ্‌ঘোর ব্রহ্মচর্য পালনপূর্বক তপস্যা করেন। সেই তপস্যাতে পত্নী রুক্মিণীও সমান ব্রতচারিণী ছিলেন। তাহার পরে তাঁহাদের তেজস্বী পুত্র প্রদ্যুম্নের জন্ম হয়। কাজেই মাতুল-কন্যাকে বিবাহের দ্বারা অর্জুনের তপস্যারও কোনো ক্ষতি হয় নাই—

ব্রহ্মচর্যং মহদ্‌ঘোরং চীর্ত্বা দ্বাদশবার্ষিকম্।
হিমবৎপার্শ্বমভ্যেত্য যো ময়া তপসার্জিতঃ।
সমানব্রতচারিণ্যাং রুক্মিণ্যাং যোঽন্বজায়ত।
সনৎকুমারস্তেজস্বী প্রদ্যুম্মো নাম যে সুতঃ। সৌপ্তিক ১২, ৩০, ৩১

 শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর পরে সত্যভামা প্রভৃতি কৃষ্ণপত্নী বৈধব্যব্রত পালন করিয়া জীবিত রহিলেন, কিন্তু রুক্মিণী ও আর-কয়েকটি পত্নী কৃষ্ণের সঙ্গে অগ্নিপ্রবেশ করিলেন—

রুক্মিণীত্বথ গান্ধারী শৈব্যা হৈমবতীত্যপি।
দেবী জাম্ববতী চৈব বিবিশুর্জাতবেদসম্। মৌষল ৭.৭৩

 মহাভারতের যুগে নারী যে দ্বিতীয়বার বিবাহ করিতে পারিতেন তাহারও খবর মেলে দময়ন্তীর দ্বিতীয় স্বয়ংবরের আয়োজনে। জানাইয়া দেওয়া হইল, নল রাজা জীবিত আছেন কি না জানা যাইতেছে না, অতএব সূর্যোদয়ে দময়ন্তী দ্বিতীয়বার ভর্তা বরণ করিবেন—

সূর্যোদয়ে দ্বিতীয়ং সা ভর্তারং বরয়িষ্যতি।
নহি স জায়তে বীরো নলো জীবতি বা ন বা। বন ৭০.২৬

ভীমকন্যা দময়ন্তী পুনরায় স্বয়ংবর করিবেন শুনিয়া রাজা ও রাজপুত্রগণ সেখানে যাইতে লাগিলেন (বন ৭০. ২৪)। কাজেই ইহা বৈধ ও সর্বসম্মত ছিল। বিবাহে নারীদের এইসব অধিকারের কথা তখনকার অন্যান্য বহু পুরাণেই পাওয়া যাইবে

 বিবাহের অধিকার বাদ দিলেও তখনকার দিনে নারীরা ধর্ষিতা হইলে এখনকার নারীদের মত সমাজে পরিত্যক্তা হইতেন না। ধর্ষণকারী পুরুষই অপরাধী বলিয়া গণ্য হইত। ইহাই মহাভারতের যুক্তিসংগত মত—

এবং স্ত্রী নাপরাধ্নোতি নর এবাপরাধ্যতি।
নাপরাধোঽস্তি নারীণাং নর এবাপরাধ্যতি। শাস্তি ২৬৫, ৩৮