এইখানে চিরকারিকোপাখ্যানে পিতার মহত্ত্বও ঘোষিত—
পিতা ধর্মঃ পিতা স্বর্গ পিতাহি পরমং তপঃ।
পিতরি প্রীতিমাপন্নে সর্বাঃ প্রীয়ন্তি দেবতাঃ। শান্তি ২৬৫, ২১
আবার মাতাই সর্বকুলের রক্ষয়িত্রী। কোন্ সন্তান কাহার ঔরসে জাত, কাহার কি গোত্র, কে কাহার সন্তান তাহার তত্ত্ব একমাত্র জানেন মাতা। সমাজ তাহার কি খবর রাখে—
মাতা জানাতি যদ্ গোত্রং মাতা জানাতি যস্য সঃ। শান্তি ২৬৫.৩৫
নারীদের যে শুধু সামাজিক অধিকারই তখন প্রশস্ত ছিল তাহা নয়। শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে তাঁহাদের তখন সাধনারও বিলক্ষণ অধিকার ছিল। যযাতির কন্যা মাধবী ছিলেন ‘বহুগন্ধর্বদর্শনা’ (উদ্যোগ ১১৬. ৩)। এখানে নীলকণ্ঠ বলেন—
গন্ধর্বাণাং দর্শনং শাস্ত্রং গীতবিদ্যাদি যস্যাম্ সা।
মহাভারতের মনস্বিনী নারীদের মধ্যে শুধু দ্রৌপদীর নামই নহে, আরও অনেকের নাম করা যায়। বনপর্বের ৫৩-অধ্যায় হইতে ৭৯-অধ্যায় পর্যন্ত দময়ন্তীর সৌন্দর্য মাধুর্য তেজ নীতি ধর্মজ্ঞান সবই চমৎকার। যাঁহার জানিতে ইচ্ছা হয় তিনি মহাভারতে মূল আখ্যানগুলি দেখিবেন।
ধীমতী সুলভার কথা পূর্বেই বলা হইয়াছে। পিঙ্গলা নামে এক বারনারীর কথা মহাভারতে (শাস্তি ১৭৪. ৫৬) আছে। প্রেমের বেদনাতে তাঁহারও শান্তা বুদ্ধি ও গভীর জ্ঞান জন্মিয়াছিল। পিঙ্গলার গাথার কথা তাই মোক্ষধর্মপর্বে ভীষ্মের মুখে শুনিতে পাওয়া যায় (১৭৪ অধ্যায়)। তাহার শ্রোতা যুধিষ্ঠির। এই পিঙ্গলাই একদিন আশা নিরাশা জয় করিয়া পরমাশান্তি লাভ করিয়াছিলেন (শান্তি ১৭৪. ৬২)।
শকুন্তলার শ্রী ও মাধুর্যের কথাই সবাই জানেন। তাঁহার তেজও কিরূপ অপরিসীম ছিল তাহা জানিতে হইলে আদিপর্বের ৭৪-অধ্যায়টি আগাগোড়া পড়িতে হয়।
ক্ষত্রিয়কন্যা বিদুলাও বহু বেদ অধ্যয়ন করিয়া বিশ্রুতা ও বহুশ্রুতা তপস্বিনী হইয়াছিলেন—
ক্ষত্রধর্মরতা দান্তা বিদুলা দীর্ঘদর্শিনী।
বিশ্রুতা রাজসংসৎসু শ্রুতবাক্যা বহুশ্রুতা। উদ্যোগ ১৩৩, ৩
তেজের বিষয়ে বলিতে গেলে বিছুলার কথাই সকলের আগে মনে হয়।