পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
প্রাচীন ভারতে নারী

উল্লিখিত। কিন্তু, তাহা সত্ত্বেও সমাজে নারীদের মধ্যে সুরার বিলক্ষণ প্রচলন ছিল।

 সহমরণ প্রথার কথা পূর্বে হইয়াছে। এই প্রথা আর্যদের মধ্যে খুব প্রাচীন বৈদিক যুগে ছিল না। রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকর বলেন, বরং এই প্রথা প্রাচীনকালে য়ুরোপে ও পশ্চিম এশিয়ায় আর্যেতর জাতির মধ্যেই প্রচলিত ছিল। এদেশে আর্যদের মধ্যে এই প্রথা বিদেশী অনার্যদের নিকট হইতে আমদানি করা। পঞ্চনদ প্রদেশের তক্ষশিলাদি ভূভাগে তখন গ্রীকদের প্রভাব ছিল বেশি। খ্রীস্টের তিন-চারিশত বৎসর পূর্বে সেইসব স্থানে সতীদাহ খুব বেশি রকম প্রচলিত ছিল।[১]

 বেদের যেসব মন্ত্র এই প্রথার প্রমাণরূপে ব্যবহৃত হয় তাহাদের অর্থ কিন্তু সতীদাহকে সমর্থন করে না। পরবর্তী স্মৃতি ও ব্যাখ্যানাদির রচয়িতারা বরং ইহার সমর্থন করেন। অথর্বের একটি মন্ত্র আছে—

ইয়ং নারী পতিলোকং বৃণানা, ইত্যাদি। ১৮. ৩. ১.

ভাষ্যে স্বামীর চিতায় আরোহণ-সমর্থনে শঙ্করাচার্য শ্রুতিবাক্য না পাইয়া স্মৃতি র বাক্য উদ্ধৃত করিয়াছেন—

স্মর্যতে হি, ভর্তার উদ্ধরেন্নারী প্রবিষ্টা সহ পাবকম্।

আশ্বলায়ন-গৃহ্যসূত্রেও এই একই মত দেখা যায়। ঋগ্বেদের যে মন্ত্রটি এখন সতীদাহের প্রধান সমর্থকরূপে ব্যবহৃত, রমেশ দত্ত প্রভৃতি পণ্ডিতেরা দেখাইয়াছেন তাহার অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। মূলে আছে, ‘আরোহন্তু জনয়ো যোনিরগ্রে’ (ঋগ্বেদ ১০, ১৮, ৭), কিন্তু তাহা বদলাইয়া করা হইয়াছে ‘যোনিমগ্নে’।

 ঋগ্বেদের মূল হইল এই—

ইমা নারীরবিধবাঃ সুপত্নীরাংজনেন সর্পিষা সংবিশস্তু।
অনশ্রবোঽনমীবাঃ সুরতা আরোহন্তু জনয়ে যোনিরগ্রে। ১০. ১৮.৭

 সায়ণও ইহার ভাষ্যে বলেন, এইসব অবিধবা শোভনপতিকা নারী স্নেহসিক্ত ও অঞ্জনে মণ্ডিত হইয়া আপন ঘরে প্রবেশ করুন। অশ্রুজলহীন ও নীরোগ হইয়া শোভন রত্নে মণ্ডিতা হইয়া এইসব ভার্যা প্রথমেই আপন ঘরে আসুন।


  1. Oxford History of India, V. A. Smith. p 665