পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদর্শ ও অধিকার
২৫

প্রাণ দিতে বীরপুরুষরাও পারেন নাই। স্বামীর সঙ্গে অনুমৃতা সতীদের আত্মত্যাগের মধ্যে যে শান্ত বীরত্ব আছে তাহার মহত্ত্ব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিয়াছেন।

 বাংলাদেশে হঠী বিদ্যালংকার প্রভৃতি নারী নানাশাস্ত্র অধ্যাপনা করিয়া অক্ষয় কীর্তি রাখিয়া গিয়াছেন।

 কাশী যখন মোগল শাসনের শেষভাগে নিষ্প্রভ ও অশক্ত হইয়া পড়িল তখন তাহাকে নূতন করিয়া গড়িয়া তুলিলেন দুই নারী। একজন রানী ভবানী আর-একজন অহল্যাবাঈ। কাশীকে পুনরুজ্জীবিত করিয়া তাঁহারা ভারতীয় সংস্কৃতিকে নবজীবন দান করিলেন।

 কাজেই নারীরা যে এদেশে শুধু ঘরে ও সংসারেই রাজত্ব করিয়াছেন তাহা নহে। মহাভারতে দেখি, সেখানেও সকলের আহারে-বিহারে নারীরাই কর্তৃত্ব করিতেন। পত্নীরা স্বামীদের কাছে সম্মানও যথেষ্ট পাইয়াছেন। পথশ্রান্তা দ্রৌপদীর পথখেদ দূর করিতে নকুল ও সহদেব তাঁহার পাদসংবাহনও করিয়াছেন—

তস্যা যমৌ রক্ততলৌ পাদৌ পূজিতলক্ষণৌ।
করাভ্যাং কিণজাতাভ্যাং শতকৈঃ সংববাহতুঃ। বন ১৪৪-২০

 নারীদের ভালো দিকই দেখান হইল। তাঁহাদের মধ্যে মন্দও কিছুকিছু যে না ছিল তাহা নহে। মহাভারতের যুগেও দেখা যায়, নারীদের মধ্যে সুরাপানাদি দোয বেশ ছিল। খাণ্ডবদাহপর্বে দেখা যায়, দ্রৌপদী সুভদ্রা প্রভৃতি সহ বড় বড় ঘরের নারীরা তাহাতে ছিলেন। সেখানেও উৎসবের আনন্দে কোনো নারী হাসিতেছেন, কেহ হল্লা করিতেছেন, কেহ নাচিতেছেন, কেহ সুরাপান করিতেছেন—

কাশ্চিৎ প্রহৃষ্টা ননৃতুশ্চুক্রূশুশ্চ তথাপরাঃ।
জহসুশ্চাপরা নার্যঃ পপুশ্চান্যা বরাসবম্। আদি ২২২ - ২৪

শিশুপালবধকাব্যেও রেবতী-বলরামের সুরাপান-উৎসব চমৎকার বর্ণিত দেখা যায়—

ঘূর্ণয়ন্ মদিরাস্বাদমদপাটলিতদ্যুতৌ।
রেবতী বদনোচ্ছিষ্টপরিপূততটে দৃশৌ। ২.১৬

তবে পাণিনির (৩.২.৮) বার্তিকে (২) নারীদের সুরাপান পাতক বলিয়াই