দেবতার বরে ‘অপ্রতিবারিতা’ ‘স্বৈরিণী’ (ঐ ৩১.৩৮)। এসব কথা পূর্বেও বলা হইয়াছে। শ্রীযুত নঞ্জুনদায়্যা এবং অনন্তকৃষ্ণ আইয়ার মনে করেন স্বেচ্ছাবিহারিণী দ্রবিড় কন্যাদের মধ্যে বিবাহের পূর্বে যে ব্যভিচার দেখা যাইত তাহা দেখিয়াই হয়তো এদেশে আর্য বরকন্যাদের বিবাহের বয়স সীমাবদ্ধ করা হইল।[১]
মন্বাদি স্মৃতিতে আমরা আট প্রকারের বিবাহের উল্লেখ পাই। তাহার মধ্যে ব্রাহ্ম দৈব আর্য প্রাজাপত্য এই চতুর্বিধ বিবাহই মন্বাদির প্রশংসিত। প্রচলিত থাকিলেও আসুর গান্ধর্ব রাক্ষস পৈশাচ এই চতুর্বিধ বিবাহ নিন্দিত। আসুর-বিবাহে কন্যার জন্য ধন গৃহীত হয়, গান্ধর্ব-বিবাহে বরকন্যা কামতঃ পরস্পরে যুক্ত হয়, অনিচ্ছায় কন্যা হৃত হইলে হয় রাক্ষস-বিবাহ, সুপ্তা বা প্রমত্তা কন্যাকে গোপনে সংগ্রহ করাকে পৈশাচ-বিবাহ বলে (মনু, ৩. ২১-৩৪)।
সগোত্রা সমানপ্রবরা কন্যাকে বিবাহ করা চলে না। বাংলাদেশে গোধূলিতে বিবাহ হইলেও দিনে বিবাহ হয় না। ভারতের আর-সব স্থানে দিবাভাগে বিবাহ হয়। মহারাষ্ট্র গুজরাট প্রভৃতি প্রদেশে এবং ভারতের পশ্চিম অঞ্চলে দিনেও বিবাহ হয়। অনন্তকৃষ্ণ আইয়ার বলেন, মহীশূর প্রভৃতি স্থানের শুদ্ধবেদাচারী ব্রাহ্মণদের মধ্যে দিবা-বিবাহ প্রচলিত। বরযাত্রীরা বিবাহের পূর্বরাত্রিতে কন্যার বাড়ির অতিথি হন। সকালে বরকন্যা স্নাত ভূষিত হইলে বরণ ও মুখদর্শন হয়। তারপর মধুপর্ক ও বিবাহ আচার চলিতে থাকে। বিবাহহোম পানিগ্রহণ লাজ-হোম সপ্তপদী প্রভৃতি তখনই হইয়া যায়। সন্ধ্যার সময় বরকন্যা অরুন্ধতী দর্শন করেন। সন্ধ্যার সময় গৃহপ্রবেশ-হোম সম্পন্ন হয়। তাহার পর স্থালীপাক হইয়া ঔপাসনে অগ্নিহোত্র হয়।[২]
এই যে অনুষ্ঠানপূর্বক বিবাহ এবং পতিপত্নীর পবিত্র সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা, ইহা একদিনে সাধিত হয় নাই। সমাজের মধ্যে বহুযুগের সংস্কৃতির ও সভ্যতার ফলে ক্রমে ইহা স্থাপিত হইয়াছে। বিবাহাদি সামাজিক অনুষ্ঠান স্থাপিত হইলেও তাহার আশেপাশে বহুকাল ধরিয়া নানা চ্যুতি-বিচ্যুতিও চলিয়াছে। প্রবল বৃষ্টি হইলে যেমন কতক জল নদীর ধারাপথে চলে, প্রবলতর বন্যা হইলে