বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
প্রাচীন ভারতে নারী

কতকটা জল নদীর ধারাপথে চলিলেও আশেপাশে বন্যার অনেকখানি প্লাবন চলে, তেমনি কতক মানুষের মধ্যে এই সামাজিক শৃঙ্খলা চলিলেও মানুষের এই আদিম প্রবৃত্তির বন্যাও যে আশেপাশে বিলক্ষণ বহিয়া যাইত তাহার পরিচয় প্রাচীন বেদ-পুরাণেও পাওয়া যায়। খাল কাটিয়া বন্যা রোধ করা বরং সহজ, কিন্তু বিধিবিধানের দ্বারা মানবের এই দুর্বার প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণ আয়ত্ত করা কঠিন। আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতসাহিত্যই তাহার সাক্ষ্য দিবে। আর যেসব মুনিঋষিরা সমাজকে সংযত করিতেন সেই প্রবলদেবতা কামের কাছে তাঁহারাও কম বিড়ম্বিত হন নাই। তাহা ছাড়া যেসব দেবতার দোহাই দিয়া মানুষকে নিবৃত্ত করিতে হইবে তাঁহাদেরও বহু দুর্গতির কথা শাস্ত্রে পুরাণে বর্ণিত। আইনে দেখা যায় বটে ব্যভিচারীদের প্রতি কঠিন দণ্ডের বিধান ছিল। বরুণপ্রঘাস নামে বরুণপাশমোচনের জন্য একটি অনুষ্ঠান আষাঢ় পূর্ণিমায় করিতে হইত।[] ইহাতে স্ত্রীকে তাহার গোপন প্রেমাস্পদের নাম প্রকাশ্যে বিজ্ঞপিত করিতে হইত।

 শাঙ্খায়ন-গৃহ্যসূত্রে দেখা যায়, মাতা পাতিব্রত্য হইতে ভ্রষ্ট হইলে সেই দোষস্খলনের জন্য যজ্ঞকালে ব্রতীকে মন্ত্রপাঠ করিতে হয়। সামান্য এক-আধটু পাঠান্তর থাকিলেও আপস্তম্ব-শ্রৌতসূত্রে (১. ১. ৯.) আপস্তম্ব-মন্ত্রপাঠে (২. ১৯. ১) ও হিরণ্যকেশি-গৃহ্যসূত্রে (২.১০.৭) সেই একই কথা। মনু পর্যন্ত এইরূপ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা দিয়াছেন। তিনি সেইজন্য মন্ত্রেরও উল্লেখ করিয়াছেন—

যন্মে মাতা প্রলুলুভে বিচরন্ত্যপতিব্রতা।
তন্মে রেতঃ পিতা বৃঙ্‌ক্তামিত্যসৈতন্নিদর্শনম্। ৯. ২০

অর্থাৎ মাতার ব্যভিচারজনিত দোষ পিতার দ্বারা শুদ্ধ হউক। এইজন্যই কি কাঠক-সংহিতাতে (৩০.১) ব্রাহ্মণের পিতামাতার খবর জিজ্ঞাসা করা নিষিদ্ধ ছিল, ধর্মশাস্ত্রে ও দৈবকর্মে ব্রাহ্মণপরীক্ষা (শঙ্খ-সংহিতা ১৩. ১) নিষিদ্ধ ছিল।

 পুরুষদের ব্যভিচারের কথাও বহুস্থলে উল্লিখিত আছে। ইন্দ্র-অহল্যার কথা সকলেই জানেন। যজুর্বেদে তৈত্তিরীয়-সংহিতায় (৭.৪. ১৯. ২-৩)


  1. মৈত্রায়ণী-সংহিতা ১, ১০. ১১; শতপথ ব্রাহ্মণ ২, ৫.২.২.