পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সামাজিক অবস্থা: বিবাহ অনুষ্ঠান
৪৫

 ইহার পরের মন্ত্রটি এই—

সোমো দদদ্ গন্ধর্বায় গন্ধর্বোদদদগ্নয়ে। ১০, ৮৫, ৪১

সোম ইঁহাকে দিলেন গন্ধর্বকে, গন্ধর্ব দিলেন অগ্নিকে।

 এখানে দেবতার সঙ্গে কন্যার বিবাহ যে কোনো মতেই হইতে পারে না তাহা সকলেই বোঝেন। তবে এইকথা বলিবার আসল তাৎপর্য কি? গোভিলীয়-গৃহ্যসূত্র-পরিশিষ্টে দেখা যায় (২. ১৭-১০) ঋতুমতী না হইলে কন্যাকে বলে ‘নগ্নিকা’; ঋতুমতী হইলে ‘অনগ্নিকা’, এই অনগ্নিকা কন্যাই বিবাহে দান করিতে হয়। নগ্নিকাকে ‘গৌরী’ এবং ঋতুমতী অনগ্নিকাকে ‘রোহিণী’ও বলে। যৌবন চিহ্ন দেখা না গেলে ‘কন্যা’, কুচাদিহীনাকেও ‘নগ্নিকা’ বলে। যৌবনব্যঞ্জন দেখা গেলে সোম সেই কন্যাকে গ্রহণ করেন (অর্থাৎ তখন সে সৌম্য হয়), পয়োধর হইলে গন্ধর্ব গ্রহণ করেন এবং ঋতুমতী হইলে অগ্নি তাহাকে গ্রহণ করেন। তাই অব্যঞ্জনোপেতা, অরজা, অপয়োধরা কন্যকাদান ভালো নয়, কারণ বেদে-উক্ত দেবতাদের সঙ্গে তাহার তখনও কোনো যোগ হয় নাই—

তস্মাদবাঞ্জনোপেতামরজামপয়োধরাম্।
অভুক্তাং চৈব সোমাদ্যৈঃ কন্যকাং ন প্রশস্যতে।

 এইসব দেবতাদের সঙ্গে যোগের ও ভোগের কথা যে অর্থবাদমাত্র তাহা বুঝা যায় বসিষ্টস্মৃতির এই শ্লোক দেখিয়া—

পূর্বঃ স্ত্রিয়ঃ সুরৈর্ভুক্তাঃ সোমগন্ধর্ববহ্নিভিঃ॥[১]

অর্থাৎ, পূর্বে স্ত্রীগণ সোম গন্ধর্ব বহ্নির দ্বারা ভুক্ত। ইহার তাৎপর্যও পরশ্লোকেই তিনি বলিতেছেন, সোমদেবতা নারীকে দেন শুচিতা, গন্ধর্ব দেন শিক্ষিত বাণী, অগ্নি দেন সর্বভক্ষত, তাই নারীগণ নিষ্কল্মষ—

তাসাং সোমেঽদদচ্ছৌচং গন্ধর্বঃ শিক্ষিতাং গিরম্।
অগ্নিশ্চ সর্বভক্ষত্বং তস্মান্নিষ্কল্মষাঃ স্ত্রিয়ঃ। ২৮.৬

বৌধায়নও এইকথা বলেন (বৌধায়ণ-স্মৃতি, ২. ২. ৫৮)।

 মহর্ষি অত্রি বলেন—

পূর্বং স্ত্রিয়ঃ সুরৈর্ভুক্তাঃ সোমগন্ধর্ববহ্নিভিঃ।
ভুঞ্জন্তে মানবাঃ পশ্চান্ ন তা দুয্যন্তি কর্হিচিৎ[২]


  1. স্মৃতীনাং সমুচ্চয় সংস্করণে, বসিষ্টস্মৃতি, আনন্দাশ্রম ২৮. ৫
  2. অত্রিসংহিতা, মন্মথনাথ দত্ত সংহিতা, ৯০