পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
প্রাচীন ভারতে নারী

পূর্বে সমবেত সকলে এই সুমঙ্গলী নববধূকে আশীর্বাদ করুন (১৪. ২.২৮)। “হে নববধূ, আজ হইতে ইন্দ্রাণীর ন্যায় ঊষার ন্যায় শোভমানা হও, নবচেতনায় সকলকে জাগ্রত কর (১৪.২, ২১)।

 “এইসব তরুণীরা যখন আনন্দিত মনে, আগ্রহে পতির গৃহে যাত্রা করে তখন আমরাও বলি ‘স্বাহা’ (১৪. ২. ৫২), অর্থাৎ ‘ভালো ভালো’। সর্বযশ সর্বরস ইহাতে প্রবেশ করুক (১৪. ২. ৫৮)। এই কন্যাও লাজ-শস্য ছড়াইয়া পতিকুলের শুভ কামনা করে (১৪.২.৬৩)। হে কন্যা, গৃহের পত্নী হইয়া গৃহে গমন কর, শতজীবিনী হও, সবিতা তোমাকে দীর্ঘায়ু করুন (১৪. ২.৭৫)।”

 গৃহ্যসূত্র ও পরবর্তী স্মৃতি এবং নিবন্ধগুলির মধ্যে ক্রমে ক্রমে বিবাহপ্রথা যেরূপ বিপুল হইয়া উঠিল তাহা অনুসন্ধিৎসু পাঠকেরা সহজেই দেখিতে পারেন। তাহার পর দেশাচার কুলাচার ভেদে স্ত্রীগণের নানা আচার-অনুষ্ঠানে বিবাহ একটা বিরাট মহোৎসবে পরিণত হইল।

 বেদে ‘সপত্নী’ শব্দ আছে। ঋগ্বেদের তৃতীয় মণ্ডলে প্রথম ও ষষ্ঠ সূক্তে এবং আরও নানা স্থানে সপত্নী কথাটি দেখা যায়। ইহাতে সেইখানে একাধিক পত্নীর উল্লেখ থাকিলেও সাধারণ একপত্নী থাকাই প্রথা ছিল, যদিও মনুর দশ ও যাজ্ঞবল্ক্যের দুই পত্নী ছিলেন। রাজারা একাধিক বিবাহ করিতেন। কিন্তু বৈদিক সাহিত্য দেখিলে ইহাই মনে হয়, একপত্নী লইয়াই সাধারণত সকলেই ঘর করিতেন। এক স্ত্রীর বহুপতি থাকা আর্যেতর জাতির মধ্যে প্রচলিত থাকিলেও আর্যদের মধ্যে তাহা চলিত ছিল না। সূর্যার বিবাহ-বিষয়ে যে ‘পতিভ্যো জায়াং’ কথা আছে এখানে পতিকুল সম্বন্ধে অথবা সম্মানে বহুবচন করা হইয়াছে। অর্থব বেদের (১৪. ১. ৬১) “স্যোনং পতিভ্যো বহুতুং কৃণুত্বম্” অর্থাৎ পতিকুলের জন্য এই রথযাত্রাকে আনন্দময় কর।

 সূর্যার বিবাহ প্রসঙ্গেই একটি কথা আছে, “তুরীয়স্তে মনুষ্যজাঃ”— এই মানুষ তোমার চতুর্থপতি (ঋগ্বেদ. ১০.৮৫, ৪০)। ইহাতে কেহ যেন ভুল না বোঝেন। কারণ পূর্ণমন্ত্রটি এই—

সোমঃ প্রথমো বিবিদে গন্ধর্বো বিবিদ উত্তরঃ।
তৃতীয়ো অগ্নিষ্টেপতিস্তরীয়স্তে মনুষ্যজাঃ।

অর্থাৎ, প্রথমে তোমাকে পাইয়াছেন সোমদেবতা; তাহার পর তোমাকে পাইলেন গন্ধর্ব; অগ্নি তোমার তৃতীয় পতি; চতুর্থ পতি হইলেন এই মনুষ্যবর।