বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আদর্শ ও অধিকার

 নর ও নারী এই দুই লইয়াই মানব-সংসার। যতদিন মানুষের সৃষ্টি, ততদিন এইভাবেই চলিয়া আসিতেছে। শ্রুতি বলেন, আদিতে একমাত্র পরমপুরুষ ছিলেন একা। একা-একা তাঁহার ভালো লাগিল না—

স বৈ নৈব রেমে। বৃহদারণ্যক ১.৪.৩

 তখন সেই প্রজাপতি নিজেকে দুই ভাগে বিভক্ত করিলে পুরুষ ও নারীর উৎপত্তি হইল। সেই পুরুষ প্রকৃতিই আদি পতি ও পত্নী—

স ইমমেবাত্মানং দ্বেধা পাতয়‍ৎ
ততঃ পতিশ্চ পত্নী চাভবতাম্। বৃহদারণ্যক ১.৪.৩

তাই শ্রুতি বলিলেন, এই যে জায়া তিনি নিজেরই অর্ধ ভাগ—

অর্ধো হ বা এষ আত্মনো যজ্ জায়েতি।

 পুরুষ ও নারী একই পরমপুরুষের দুই ভাগ। এককে বাদ দিয়া অন্যে অসম্পূর্ণ। যে সমাজ নারীকে জ্ঞানহীন করিয়া শুধু পুরুষকেই শক্তিশালী করিতে চায় বা পুরুষকে পঙ্গু করিয়া শুধু নারীকেই প্রবল করিতে চায় তাহারা পরম-পুরুষের এক অর্ধেক পক্ষাঘাতগ্রস্ত করিয়া তাঁহার অংশমাত্র লইয়া অগ্রসর হইতে চাহে। শাস্ত্রে আছে, রথের দুই চাকা, তাদের একটিকে বাদ দিয়া আর-একটিমাত্র চাকা লইয়া রথ চলিতে পারে না—

যথা হ্যেকেন চক্রেণ ন রথস্য গতির্ভবেৎ।

 মহাভারতের যুগেও নারীদের এই সম্মানের কথা দেখিতে পাই। মহাভারত (আদি ৭৪.৪১) বলেন, মানুষের আধখানাই তার পত্নী। স্বামী ও স্ত্রী দুই যুক্ত না হইলে পরিপূর্ণ সাধনা হইবে কেমন করিয়া?

 নরনারী উভয়ের প্রাণশক্তিতেই ভারতের সাধনা দিনে-দিনে অগ্রসর হইতেছিল। যেদিন হইতে নারীর সাধনাকে পঙ্গু করিয়া ভারতীয় সাধনা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হইল সেইদিন হইতে ভারতের সাধনার ইতিহাস নানা শোচনীয় দুর্গতিতে ভরিয়া উঠিল।