ঋগ্বেদে দেখি নববধূকে আশীর্বাদ করিয়া ঋষি বলিতেছেন, শ্বশুর শাশুড়ী ননদ দেবর সকলেরই কাছে তুমি সম্রাজ্ঞী হও—
সম্রাজ্ঞী শ্বশুরে ভব সম্রাজ্ঞী শ্বশ্র্বাং ভব
ননান্দরি সম্রাজ্ঞী সম্রাজ্ঞী অধি দেবৃষু। ঋগ্বেদ ১০.৮৫.২৬
আপন সংসারের রানী হইয়া তুমি তোমার সংসারে প্রবেশ কর—
গৃহান্ গচ্ছ গৃহপত্নী যথাসো। ঋগ্বেদ ১০.৮৫.২৬
এই সংসারকে পরিচালনা করিবার জন্য সদা সাবধানে জাগিয়া থাক—
অস্মিন্ গৃহে গার্হপত্যায় জাগৃহি। ঋগ্বেদ ১০.৮৫.২৭
তাই ঘরে-ঘরে বধূকে ‘সুমঙ্গলী’ বলিয়া স্বাগত করা হইয়াছে। সকলের কাছে নববধূর সৌভাগ্য-আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হইয়াছে—
সুমঙ্গলীরিয়ং বধূরিমাং সমেত পশ্যত।
সৌভাগ্যমস্যৈ দত্তয়াথাস্তং বি পরেতন। ঋগ্বেদ ১০.৮৫.৩৩
নববধূর প্রতি তাঁহাদের আশীর্বাদ ছিল, ইন্দ্রাণীর ন্যায় নিত্য শোভনবোধনে প্রবুদ্ধা হইয়া জ্যোতির্মুকুটভূষণা উষার সঙ্গে তুমি নিত্য প্রতিজাগরিতা থাকিও—
ইন্দ্রাণীব সুবুধা বুধ্যমানা। জ্যোবিরগ্রা উষসঃ প্রতি জাগরাসি। অথর্ব ১৪.২.৩১
বধূকে সম্রাজ্ঞী হইতে আশীর্বাদ করার সঙ্গে সঙ্গে সম্রাজ্ঞী হইবার উপায়ও বলা হইয়াছে। নদী তো অনেকই আছে, কিন্তু সিন্ধুই আপন দাক্ষিণ্য ও উদারতার গুণে সকলের প্রধান হইয়াছে; তুমিও পতিগৃহে গমন করিয়া আপন মহত্ত্ব ও দাক্ষিণ্য-গুণে সম্রাজ্ঞীর পদলাভ করিও—
যথা সিন্ধুর্নদীনাং সাম্রাজ্যং সুষুবে বৃষা।
এবা ত্বং সম্রাজ্ঞ্যেধিপত্যুরস্তং পরেত্য। অথর্ব ১৪.১.৪৩
সকলের মধ্যে দাক্ষিণ্য ও কল্যাণ বিতরণ করিতে হইলে নারীকে পঙ্গু করিয়া রাখা চলিবে না।
এই তো হইল বৈদিক যুগের আদর্শের কথা। কথা হইল, সামাজিক ইতিহাসে আমরা এই আদর্শকে অনুসৃত দেখিতে পাই কি না। বৈদিক যুগের পরে ক্রমে নারীদের অধিকার অনেক বিষয়ে যে সংকুচিত হইয়া আসিয়াছে তাহার কারণ সন্ততিলাভের জন্য বাধ্য হইয়া আর্যগণ শূদ্রকন্যাদের বিবাহ করিতেন। কন্যা কম ছিল বলিয়াই হউক, বা শীঘ্র শীঘ্র বংশবিস্তার করিবার জন্যই হউক, আর্যগণের মধ্যে শূদ্রকন্যাকে বিবাহ করার প্রথা বিলক্ষণ প্রচলিত