মহাভারতে শান্তিপর্বে তাই দেখা যায়, বাস্তবিক কে কাহার ঔরসে জন্ম লইয়াছে সেই তথ্য মাতা ছাড়া আর কেহই জানে না (শান্তি ২৬৫.৩৫)।
এইজন্যই মনু (৯. ২০) পুরাতন শ্রুতির উল্লেখ করিয়া লিখিয়াছেন—
ষন্মে মাতা প্রলুলুভে। ইত্যাদি
অন্যত্র এই মন্ত্রের আলোচনা করা গিয়াছে।
বসিষ্ঠ-স্মৃতিতেও দেখা যায়—
ন স্ত্রী দুষ্যতি জারেণ। স্মৃতি-সমুচ্চয়, ২৮.১
তাহাতে বিস্মিত হইবার কিছুই নাই। অত্রি-সংহিতায়ও (১৯৩, স্মৃতিসমুচ্চয়) এই বচনটি দেখা যায়। অত্রি আরও বলেন, যদি অসবর্ণ পুরুষের দ্বারা নারীতে গর্ভনিষিক্ত হইয়া থাকে তবে গর্ভমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত নারী অশুদ্ধ। তাহার পরই তাহার শুদ্ধি ঘটে। যখন পুনরায় রজোদর্শন হয় তখন সেই নারী বিমল কাঞ্চনের মত বিশুদ্ধি প্রাপ্ত হয়—
অসবর্ণৈস্তু যো গর্ভঃ স্ত্রীণাং যোনৌ নিষিচ্যতে।
অশুদ্ধা সা ভবেন্নারী যাবদ্ গর্ভং ন মুঞ্চতি॥
বিমুক্তে তু ততঃ শল্যে রজশ্চাপি প্রদৃশ্যতে।
তদা সা শুধ্যতে নারী বিমলং কাঞ্চনং যথা। অত্রি, ১৯৫-১৯৬
দেবল-স্মৃতিতেও (৫০. ৫১) ঠিক এই দুইটি শ্লোক দেখা যায়। জাতি- ভেদের কড়াকড়ি যতই বাড়িতে লাগিল ততই পুরুষদের পক্ষে স্ত্রীত্যাগ সহজ হইয়া আসিতে লাগিল। তাহার পূর্বে নারীদের প্রতিও সামাজিক বিধি রীতিমত উদার ও বন্ধনমুক্ত ছিল।
নারীদের এই স্বাধীনতা ক্রমে যে সংযত হইয়া আসিল এবং সমাজব্যবস্থার অধীন হইল, ইহাতে নারীদেরও সম্মতি ছিল বলিয়াই মনে হয়। কামনার বেগ যতই দুর্বার হউক নারীদের মধ্যে যে মাতৃত্বের একটি দায় আছে এবং অন্তর্নিহিত কল্যাণের একটি আদর্শ আছে, তাহাতে মনে হয় ক্রমে নারীরাই আপনাদের এই উদ্দাম স্বাধীনতাকে সংযত করিয়া আনিলেন। নহিলে শুধু বাহির হইতে সামাজিক অনুশাসনে এইরূপ হওয়া সহজ হইত না। পৃথিবীর আদিযুগে ক্রমাগত ভূগর্ভস্থ অগ্নির তাণ্ডবলীলা ভূমিকম্প প্রভৃতিরই যুগ ছিল। ক্রমে তাহা সংযত হইয়া এই পৃথিবী ধীরে ধীরে জীবধাত্রী হইয়া উঠিল। নারীদেরও ইতিহাস মনে হয় অনেকটা এইরূপ। আপন মাতৃত্বের খাতিরে