হইল। তাই যেসব অধিকার আর্যকন্যাগণ পাইতেন সেইসব অধিকার পরে শূদ্রকন্যাদের হয়তো দেওয়া হইত না। ক্রমে এইসব কারণে ভারতে নারীদেরই অধিকার কমিয়া আসিতে লাগিল। এখন তো ব্রাহ্মণকন্যা ব্রাহ্মণের পত্নী হইয়াও শূদ্রারই সমতুল্যা। বেদাদিতে তাঁহাদের অধিকার নাই। বলা বাহুল্য, পূর্বকালে এইসব শূদ্রকন্যার গর্ভে ব্রাহ্মণের পুত্রেরা ব্রাহ্মণই হইতেন। তাহা প্রসঙ্গান্তরে দেখানো হইয়াছে।
মহাভারতের যুগেই নারীদের অনেক অধিকার সংকুচিত, নারীদের চরিত্রের বিরুদ্ধে বহু কথা আলোচিত দেখিতে পাই। তবু মহাভারতের ইতিহাসের মধ্যে নারীদের গৌরবেরও বহু সাক্ষ্য রহিয়া গিয়াছে। জায়াকে মাতৃবৎ সম্মানার্হা মনে করিবে—
ভার্যাং নরঃ পশ্যেন্মাতৃবৎ। আদি ৭৪.৪৮
স্ত্রীগণ যেখানে পূজিতা, সেখানে দেবতারা সুখী। যেখানে নারীগণ অপূজিতা সেখানে সমস্ত ক্রিয়া নিষ্ফল—
স্ত্রিয়ো যত্র চ পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।
অপূজিতাশ্চ যত্রৈতাঃ সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ। অনুশাসন ৪৬.৫.৬
নারীগণ পূজনীয়া, মহাভাগা, পুণ্যা ও সংসারের দীপ্তিস্বরূপা। তাঁহারাই সংসারের শ্রী, তাই যত্নপূর্বক তাঁহারা রক্ষণীয়া—
পূজনীয়া মহাভাগাঃ পুণ্যাশ্চ গৃহদীপ্তয়ঃ।
স্ত্রিয়ঃ শ্রিয়ো গৃহস্যোক্তাস্তস্মাদ রক্ষ্যা বিশেষতঃ। উদ্যোগ ৩৮, ১১
কেহ কেহ বলিবেন, নারীদের প্রতি এইসব কথা শুধু ভাবুকতা মাত্র। আসলে নারীরা দাসী মাত্র। কিন্তু তাঁহাদের মনে রাখা উচিত, তাহা হইলে তাঁহারাই হইলেন দাসীপুত্র। সংস্কৃতে ইহার চেয়ে ঘৃণ্য গালি আর নাই। সংস্কৃত নাটকগুলিতে অতি ইতরজনের প্রতি ইতরজনোচিত চরম গালাগালি হইল ‘দাস্যাঃ পুত্রঃ’। পত্নীভাবে দেখিলেও নারীদের বড় পরিচয় তাঁহাদের মাতৃত্বে। ‘জায়া’ কথার অর্থ পত্নী হইলেও তাহার মধ্যে মাতৃত্বই প্রধান কথা। যাঁহার মধ্যে নিজে জন্মগ্রহণ করা যায় তিনিই জায়া, অর্থাৎ মাতৃরূপই নারীদের যথার্থ স্বরূপ। নারীদের প্রতি ভদ্রব্যবহার করার কথা সংহিতাকারগণ সকলেই বলেন। অসংগত ভাষা বা অভদ্র ব্যবহারে পুরুষ যে নিন্দার্হ ও দণ্ডনীয় তাহা প্রায় সর্বসম্মত। এরূপ ক্ষেত্রে অপরাধীকে ভদ্রতার শিক্ষা দিতে