দর্শন দূষ্য নহে। মহাভারতে নারীদের সভা প্রভৃতিতে যোগদানের কথা অন্যত্র আলোচিত হইয়াছে।
মনুর সময়ে যথার্থ জীবনের ক্ষেত্রে নারীর সামাজিক অধিকার যতই সংকুচিত হউক না কেন, তবু বার বার আদর্শ হিসাবে নারীদের সম্মানের কথাও শুনিতে পাওয়া যায়। এ যেন সেই জীবন্ত সীতাকে সংসার হইতে বনবাস দিয়া মহাসভায় সর্বজনসমক্ষে স্বর্ণসীতার পূজা করা। এখনও যে দেখা যায় যে যাঁহারা আসলে সকলের স্বাধীনতা হরণে তৎপর তাঁহারাই জগৎসমক্ষে ঘন ঘন গণস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জয় ঘোষণা করেন। মনুতেও দেখি—
যত্র নার্য্যস্ত পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।
যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ। ৩,৫৬
যেখানে নারীরা পূজিত সেখানে দেবতারা প্রসন্ন, যেখানে নারীরা অপূজিত সেখানে সব ক্রিয়াই অফলা। মহাভারতেও এই কথা আছে (অনুশাসন, ৪৬. ৫-৬)। স্ত্রীলোকের মুখ সদাই শুচি—
নিত্যমাস্যং শুচি স্ত্রীণাম্। মনু ৫.১৩.
স্ত্রিয়ঃ শ্রিয়শ্চ গেহেষু ন বিশেষোঽস্তি কশ্চন, এই বাক্যও মনুরই (৯.২৬)।[১]
নারী প্রসন্ন না থাকিলে কুল রক্ষা হয় না (ঐ ৩. ৬১; ৯. ৮)। গৃহের ও পরিবারের শোভা এবং কল্যাণও হয় না (৩. ৬০—৬২)। কোথাও কোথাও কুলরক্ষার্থ নারীর আদর দেখা যায়। যেমন চলিত কথাতেও দেখা যায়— ‘ফলের লোভে গাছকে সেবা’।
যাজ্ঞবল্ক্য বলিলেন, সোম দেবতা নারীকে দিলেন শুচিতা, গন্ধর্ব দিলেন মধুর বাণী, অগ্নি দিলেন সর্বমেধ্যত্ব, তাই নারীরা সদাই মেধ্যা—
মেধ্যা বৈ ঘোষিতো হ্যতঃ। ১,৭১
অত্রি সংহিতাও (১৪১) এই কথাই বলেন, এবং পরেও (১৯৪) এই কথার তিনি আবার সমর্থন করেন। বৌধায়ন-স্মৃতিতেও এই কথাই দেখি,
- ↑ তুলনীয়: মহাভারত উদ্যোগ, ৩৮.১১। দুষ্কুলাগত হইলেও স্ত্রী হইলেন অমুল্য রত্ন, মনু। (২.২৩৮)