সংস্কার আমাদের দেশে ভালো করিয়া প্রতিষ্ঠিত হইবার পূর্বেই অর্থশাস্ত্র লিখিত।
অর্থশাস্ত্রে তখনকার দিনের সামাজিক অবস্থা ও ব্যবস্থার সুন্দর একটি চিত্র পাওয়া যায়। কাজেই তখন ভারতে নারীদের অধিকার, দায়প্রাপ্তি বিষয়ে অনেক খবর এই গ্রন্থে পাওয়া যায়। অর্থশাস্ত্র নারীদের কোথাও দেবীও বলেন নাই, দানবী বা পিশাচীও বলেন নাই। তখনকার আইনের দৃষ্টিতে নারীদের ভালোমন্দ সবই অর্থশাস্ত্র নিষ্কপটে বলিয়াছেন। আইন যে তখন নারীদের খুব অনুকূল ছিল তাহা নয়। অন্ততঃ অর্থশাস্ত্র তো নারীদের বিশেষ কোনো সুবিধা দেয় নাই। অর্থশাস্ত্র (৩. ২. পৃ ১৫৩) বলেন, নারীদের প্রয়োজন পুত্রের জন্য—
পুত্রার্থা হি স্ত্রিয়ঃ।
নারী যদি অপুত্রা বন্ধ্যা হয় তবে পতি আট বৎসর প্রতীক্ষা করিবে (পরে অন্য বিবাহ করিতে পারে), যদি স্ত্রী মৃতবৎসা বা কন্যামাত্রপ্রসবিনী হয় তবে দশ বৎসর প্রতীক্ষা করিয়া তার পর অন্য বিবাহ করা চলে (ঐ ৩. ২.)। এই নিয়ম লঙ্ঘনে পূর্বপত্নীকে শুল্ক, স্ত্রীধন এবং অর্ধ আধিবেদনিক দিবে (ঐ)। দ্বিতীয় পত্নী গ্রহণে পূর্বপত্নীকে যে ধনের দ্বারা ক্ষতিপূরণ করা হয় তাহার নাম আধিবেদনিক। তাহা ছাড়া চব্বিশ পণ হইবে রাজদণ্ড। এই ক্ষতিপূরণ দিয়া পুরুষ বহু বিবাহ করিতে পারে (ঐ)। স্ত্রী প্রতিকূল আচরণ করিলে স্বামী তাহাকে তিরস্কার ও দৈহিক দণ্ডও দিবার অধিকারী (ঐ ৩. ৩. পৃ ১৫৫)।
তবু এই অর্থশাস্ত্রই বিবাহাতিরিক্ত নারীগমন প্রসঙ্গে অর্থাৎ ব্যভিচার বিষয়ে বারবার বলিয়াছেন, ‘অকামা’ অর্থাৎ অনিচ্ছুক নারীকে গমন করিবে না—
ন চ প্রাকাম্যমকামায়াং লভেত। ঐ ৪. ১২. পৃ ২২৯; ঐ, পৃ ২৩০
সবর্ণা হইলে উভয়ের সম্মতি থাকিলে এবং যৌবন প্রাপ্তির পরে তিন বৎসরের পর অভিমত-পুরুষের সহিত নারী চলিয়া যাইতে পারে (ঐ পৃ ২২৯)। নারী যদি অলংকার সঙ্গে না নেয় তবে তিন বৎসরের পর অসবর্ণ পুরুষের সঙ্গেও গেলে আইনত দোষ নাই (ঐ)। কন্যার পিতৃদত্ত কিছু সঙ্গে লইয়া গেলে তাহা