বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবাহবন্ধন-ছেদনে রাজবিধি
৭৭

চুরি বলিয়া গণ্য হইবে (ঐ)। গণিকার কন্যাকে নষ্ট করিলেও পুরুষ দণ্ডনীয় (ঐ পৃ ২৩৩)। দাসদাসীর কন্যাকে নষ্ট করিলে পুরুষ দণ্ডার্হ এবং সেই কন্যার বিবাহের শুল্ক ও স্ত্রীধন দিতে বাধ্য (ঐ)। নিষ্ক্রয়ানুরূপ দাসীগমনে পুরুষ দণ্ড্য ও ভরণপোষণ করিতে বাধ্য থাকিবে (ঐ)। স্বামী বিদেশে থাকিতে যদি পতিবন্ধু বা পরিজন নারীকে নষ্ট করে, তবে পতি আসিয়া যদি তাহাতে আপত্তি না করে তবে দণ্ড হইবে না, নচেৎ কঠিন দণ্ড হইবে (ঐ)।

 যদি নারীকে অরণ্যে, বন্যায়, দুর্ভিক্ষে বা শ্মশানে কেহ রক্ষা করে অথবা শত্রুহস্ত হইতে কেহ উদ্ধার করে, তবে নারীর সম্মতি থাকিলে সেই পুরুষ নারীকে উপভোগ করিতে পারে (ঐ পৃ ২৩১)। তবে নারী উচ্চজাতীয়া, পুত্রযুক্তা এবং অনিচ্ছুক হইলে এই উপকারের জন্য সে কিছু অর্থমাত্র পাইতে পারে (ঐ)।

 স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে উভয়কে যখন না চাহে তখন বিবাহবন্ধন ছিন্ন হইতে পারে। একপক্ষ শুধু বিবাহবিচ্ছেদ চাহিলেই চলিবে না (ঐ ৩. ৩. পৃ ১৫৫)। স্ত্রীর হাতে সে বিপন্ন হইতে পারে মনে করিয়া যদি পুরুষ বিবাহবন্ধন ছিন্ন করিতে চাহে তবে তাহাকে স্ত্রীর কাছে গৃহীত ধন ফিরাইয়া দিতে হইবে (ঐ)। নারীও এইরূপ বিবাহে বিবাহবন্ধন ছিন্ন করিতে চাহিলে স্বামীর দত্তধন ফিরাইয়া দিবে (ঐ)। এইসব ব্যবস্থা দিয়া সঙ্গে সঙ্গেই অর্থশাস্ত্র বলেন, ধর্মবিবাহে পরস্পরে ছাড়াছাড়ি নাই। একই সঙ্গে এই দুই কথা বলায় মনে হয়, ধর্মবিবাহকে আদর্শের দিক দিয়া অর্থশাস্ত্রকার অচ্ছেদ্য বন্ধন মনে করিতেন। তবে সংসারে ও সমাজে তো ধর্মই একমাত্র নিয়ন্তা নহে, অন্য নানা রকম অবস্থা দেখিয়া এবং সামাজিক রীতিনীতি আলোচনা করিয়া শাস্ত্রকারকে সমাজব্যবস্থা বা আইন করিতে হইয়াছে। এই কারণেই তিনি কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে বিবাহবন্ধনও ছিন্ন করা যায় তাহা বলিতে বাধ্য হইয়াছেন। তাঁহাকে স্বীকার করিতে হইয়াছে, কেহ কাহাকেও না চাহিলে তখন বিবাহবন্ধন-ছেদন না করিয়া উপায় কি?—

পরস্পরং দ্বেষান্মোক্ষঃ। ঐ

দুই জনের মধ্যে একজনেরও যদি বিবাহবন্ধন-ছেদনে অনিচ্ছা থাকে তবে এই বন্ধন ছিন্ন করা চলিবে না (ঐ)। আইনের চক্ষে ষোলো বছরের ছেলে আর বারো বছরের মেয়ে হইলেই তাহারা আইনের সহায়তা পাইতে