কোথাও নানা ছদ্মবেশের মধ্য দিয়া। এরূপ স্থলে পুরুষকে বিধাতা কোনো দায় দেন নাই। পূর্বেই বলা হইয়াছে, নারীকে ভগবান মাতৃত্ব দিয়া সংযত করিয়া দিয়াছেন। বিধাতার এই দানের সম্মান প্রায়ই নারীরা রক্ষা করিয়াছেন। তবে তাহার ব্যতিক্রম যে হয় না তাহাও নহে।
দক্ষিণভারতের নায়ার-নারীরা সামাজিক বিধানের বলে এবং তাঁহাদের নিজেদের সনাতন রীতি অনুসারে জীবনের সঙ্গী নির্বাচন বিষয়ে স্বাধীন। একটা নামমাত্র আনুষ্ঠানিক বিবাহ তাঁহাদের জীবনের প্রথম দিকে হয়। তাহার পর সেই কন্যা সবর্ণ বা উচ্চতরজাতীয় যাহার সহিত ইচ্ছা বাস করিতে পারেন। তবে সেই পুরুষ হীনজাতীয় হইলে লজ্জার কথা। এতটা স্বাধীনতা পাইয়াও নায়ার-কন্যারা একবার-নির্বাচিত একজনকে লইয়াই ঘর করেন[১]। একই সঙ্গে বহুজনকে লইয়া থাকিলেও তাহা তাঁহাদের সামাজিক ও সনাতনরীতিতে হয়তো বাধে না। কিন্তু তাহা ঘটিতে দেখা যায় না।
সেখানে যাঁহার সঙ্গে বিবাহ অনুষ্ঠান করা হয় তাঁহার সঙ্গে বসন ছিন্ন করিয়া বিবাহবিচ্ছেদ সাধিত হয়।[২]
নম্বুদ্রী-ব্রাহ্মণদের মধ্যে এতকাল বড় ভাই মাত্র বিবাহ করিতে পারিতেন। অন্য ভাইয়েরা নায়ার কন্যাদের লইয়াই থাকিতেন। নায়ার কন্যারা নামেমাত্র বিবাহিত হইতেন নায়ারদের সঙ্গে, কিন্তু বাস করিতেন অবিবাহিত নম্বুদ্রী ব্রাহ্মণদের সঙ্গে। ইহাতে নায়ার পুরুষরা পাইতেন না স্ত্রী, এবং নম্বুদ্রী ব্রাহ্মণকন্যারা পাইতেন না পতি। এই প্রথা দেশকে দূষিত করিতে লাগিল। তবু যাঁহারা এই প্রথা দূর করিয়া নায়ার পুরুষের সঙ্গে নায়ার কন্যার, এবং নম্বুদ্রী পুরুষের সঙ্গে নম্বুদ্রী কন্যার যথাশাস্ত্র বিবাহ ও একত্র ঘরকরার প্রস্তাব করিলেন, তাঁহারা সেই দেশের সনাতনীদের দ্বারা খুবই তিরস্কৃত ও অপমানিত হইলেন। কারণ সেই দেশে এইরূপ ব্যভিচারই সনাতনী অর্থাৎ চিরাচরিত প্রথা। জস্টিস্ শঙ্কর নায়ারকে এজন্য কম নিগ্রহ ভোগ করিতে হয় নাই। ব্যভিচারও যদি পুরাতন হয় তবে তাহাই পূজ্য, এবং শুচিতা ও সংযম যদি নূতন হয় তবে তাহাও অগ্রাহ্য। এইরূপ সংস্কারই আমাদের