অস্থি-মজ্জায় বিরাজমান। আসলে দেখা যায় আমরা শাস্ত্র মানি না, প্রথাই আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ বিধান।
এ দিকে নম্বুদ্রী ব্রাহ্মণকন্যারা পতিলাভে বঞ্চিতা, তবু তাঁহাদের মধ্যে যতটা ব্যভিচার ঘটিতে পারিত ততটা দেখা যায় না। তবু এইরূপ বিসদৃশ ব্যবস্থায় অনেক ব্রাহ্মণকন্যা যে বিপথগামিনী হইতে বাধ্য হন তাহাতে আর বিস্ময়ের কি আছে? সকলেই যে নষ্ট হন না ইহাই বিস্ময়কর।
যেসব নম্বুদ্রী ব্রাহ্মণকন্যা এইভাবে পথভ্রষ্ট হন তাঁহারা আর নম্বুদ্রীদের শুদ্ধান্তঃপুরে স্থান পান না। তাঁহাদের দুঃখদুর্গতির আর অবধি ছিল না। অবশেষে চেরাক্কলের রাজা ইঁহাদের জন্য একটা ব্যবস্থা করিলেন। তিনি তাল্লিপরম্ব নামে একজন লোককে এইজন্য অনেক ভূসম্পত্তি দান করিয়া এইসব ব্রাহ্মণকন্যাকে আশ্রয় দিবার ভার দিলেন। অবশ্য তাঁহার আশ্রয়ে থাকা না থাকা কন্যাদের ইচ্ছা। এইজন্য সেই লোকটি ‘মান্নানার’ উপাধি ও সম্মান পাইল। মান্নানারের বাড়ির চারিদিকে তাহার এতদর্থে প্রাপ্ত বিরাট ভূসম্পত্তি। লোকেরা পথভ্রষ্টা ব্রাহ্মণকন্যাকে মান্নানারের বাড়ির কাছে রাখিয়া আসে। তাহার বাড়ির চারিদিকে প্রাচীর। একটি তোরণ পূর্ব দিকে, একটি উত্তর দিকে। যদি কন্যা ইচ্ছা করিয়া পূর্ব তোরণ দিয়া প্রবেশ করে তবে সে মান্নানারের পত্নীদের মধ্যে গণিত হয়, আর যদি সে উত্তরের তোরণ দিয়া প্রবেশ করে তবে সে মান্নানারের ভগ্নীশ্রেণীর মধ্যে গৃহীত হয়। অবশ্য এই নিয়ম এখন আর পূর্বের মত ঠিকভাবে চলে না।[১]
এই মান্নানারেরা জাতিতে তিয়া। তিয়ারা অন্ত্যজ ও অস্পৃশ্য জাতি। তাড়ি প্রস্তুত করাই তাহাদের ব্যবসা। ইহাদের মেয়েরা অনেকে য়ুরোপীয়দের সঙ্গে এতকাল ঘর করিত। এখন ক্রমশঃ তাহা বন্ধ হইয়া আসিতেছে।[২] তিয়ারা নায়ারদের ধোপার কাজও করে। নায়ার-নারীরা ঋতুমতী হইলে তিয়ার কাছে সেই বস্ত্র না দিলে এবং তিয়াদের দ্বারা ধৌত বস্ত্র না পরিলে শুচি হন না। এই অস্পৃশ্য তিয়াজাতির লোক ছাড়া বিপথগামিনী ব্রাহ্মণকন্যাদের স্থান দিতে আর কেহই রাজি হয় নাই।