পাতা:প্রায়শ্চিত্ত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NS) পথপাশ্বে গাছতলায় বাহকহীন পালকিতে বসন্তরায় আসীন পাশে একজন পাঠান দণ্ডায়মান পাঠান। না, এ বুড়োকে মারার চেয়ে বাচিয়ে রেখে লাভ আছে। মারলে যশোরের রাজ কেবল একবার বকশিশ দেবে, কিন্তু একে বাচিয়ে রাখলে এর কাছে অনেক বকশিশ পাব। বসন্তরায় । খাসাহেব, তুমিও যে ওদের সঙ্গে গেলে না ? পাঠান। হুজুর, যাই কী করে ? আপনি তো ডাকাতদের হাত থেকে আমাদের ধনপ্রাণ রক্ষার জন্যে আপনার সব লোকজনদেরই পাঠিয়ে দিলেন— আপনাকে মাঠের মধ্যে একলা ফেলে যাব এমন অকৃতজ্ঞ আমাকে ঠাওরাবেন না। দেখুন, আমাদের কবি বলেন, যে আমার অপকার করে সে আমার কাছে ঋণ, পরকালে সে ঋণ তাকে শোধ করতেই হবে ; যে আমার উপকার করে আমি তার কাছে ঋণী, কোনোকালেই সে ঋণ শোধ করতে পারব না । so বসন্তরায় । বা, বা, বা ! লোকটা তো বেশ । খাসাহেব, তোমাকে বড়ো ঘরের লোক বলে মনে হচ্ছে । © পাঠান। ( সেলাম করিয়া ) ক্যা তাজ্জব ! মহারাজ ঠিক . ঠাউরেছেন । বসন্তরায় । এখন তোমার কী করা হয় ? পাঠান। ( সনিশ্বাসে ) হুজুর, গরিব হয়ে পড়েছি, চাষবাস করেই দিন চলে। কবি বলেন, হে অদৃষ্ট, তৃণকে তৃণ করে গড়েছ সেজন্যে তোমাকে দোষ দিই নে। কিন্তু বটগাছকে বটগাছ করেও তাকে ঝড়ের ঘায়ে তৃণের সঙ্গে এক মাটিতে শোয়াও, এতেই বুঝেছি তোমার হৃদয়টা পাষাণ ।