পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ওস্তাদ বলিল, “আজ থাক, আর একদিন হবে।”

 আমরা বলিলাম, “না, আর একদিন নয়, আজই শুনব।”

 ওস্তাদ বলিল, “বেলা কত হয়েছে ঠিক পান? বারোটা বেজে গেছে।”

 —“তা যাক, তুমি আরম্ভ কর।”

 আনন্দের স্বভাবই এই, তা আধখানা ভোগ করিয়া বাকী আধখানা অন্য সময়ের জন্য রাখিয়া দেওয়া চলে না। আনন্দ ভোগে বা বিতরণে হিসেবীদের স্থান নাই, উভয় ক্ষেত্রেই একমাত্র বে-হিসেবীদেরই অধিকার থাকে। একটা দৃষ্টান্ত মনে পড়িয়া গেল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ধোপদুরস্ত জামা কাপড়ে যাতে ধুলা না লাগে, তার জন্য সতর্কতা ও সাবধানতা তাহাই সংসারী ও হিসেবী মানুষের স্বভাব। আর যখন বুক আনন্দে ভরিয়া যায়, তখন সেই ধোপদুরস্ত জামা কাপড় শুদ্ধই ধূলায় আমরা গড়াগড়ি দিয়া থাকি, ইহাই মানুষের বেহিসেবী চরিত্র। আনন্দের স্বভাবই এই যে, সে কোন হিসাব মানে না, সে বে-হিসেবী।

 আমরাও আনন্দে আক্রান্ত হইয়াছিলাম, বন্দিত্বের কথা, নাওয়া-খাওয়ার কথা বিস্মৃত হইয়াছিলাম, তাই বেলা বারোটা বাজিয়া গেলেও আমাদের পক্ষে বেলা হইতে পারে নাই।

 মদই হউক বা অমৃতই হউক, দুটোর মধ্যেই নেশা আছে, একটাতে বুদ্ধি আচ্ছন্ন হইয়া সমস্ত হিসাব বিস্মৃত হইতে হয়, আর একটার বুদ্ধি প্রোজ্জ্বল থাকিয়াও মনটা সমস্ত হিসাবের চৌহদ্দীর বাহিরে চলিয়া যায়। ঐ নেশাতেই আমাদের সেদিন পাইয়াছিল, আমরা যেন কলস উপুড় করিয়া আনন্দ-রস বা মদ্য-পানীর আকণ্ঠ পান করিয়া লইয়াছিলাম।

 বাধ্য হইয়াই অমরকে আবার আরম্ভ করিতে হইল। ওস্তাদ শুরু করিল,—

 —“তখন প্রেসিডেন্সী জেলে, জ্বরে বিছানায় পড়ে আছি। প্রকৃতির আহ্বান ঠেলা দিল, উঠতে গিয়ে খাটিয়ার পায়াতে পাটা লেগে মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ল, বাবা। ও-ব্যাটা ঘুঘুদাশ পাশের সীটে চেয়ারে বসে বই পড়ছিল।”

১১৪