পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কোট্টাম সাহেব ইহার পরে যেন কতকটা শান্ত হইলেন বলিয়া মনে হইল। কিন্তু স্বভাব যাইবে কোথায়? কোট্টাম সাহেবের স্বভাবদোষে ও বুদ্ধির ত্রুটিতে তিনি কিছুকাল পরেই বক্সা-ক্যাম্পে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করিয়া বসিয়াছিলেন। তাঁহার নিজের ও সেই সঙ্গে শ’খানেক বন্দীরও জীবন যে সেদিন শেষ হয় নাই, সেটা নেহাৎ দৈবের দয়া। আমরা বক্সা ত্যাগ করার পরেই ঘটনাটি ঘটে।

 সুরপতি চক্রবর্তীর নাম আপনাদের স্মরণ আছে কিনা জানি না। কিন্তু তাঁহাকে দেখিলে এবং জানিলে জীবনে কেহ ভুলিতে পারিবেন না। দীর্ঘকায়, রোগা মানুষ; সারা মুখে খাড়ার মত একটা নাক ঝুলিয়া আছে, আর আছে দুইটি চোখ, যাহা শিশুর চোখের মত পরিষ্কার। আসল খবরটাই বলা হয় নাই, রংটি ব্রাহ্মণের কিন্তু আবলুস কালো। ডেটিনিউদের মধ্যে যদি প্রতিভাবান ও মেধাবী বলিয়া কাহাকেও গ্রহণ করিতে হয়, তবে এই সুরপতিবাবু। এম এস-সি পরীক্ষার আগে ধরা পড়েন। ফরাসী ভাষাতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীর প্রথম হন। পরিচয় আরও একটু বাকী আছে। পুলিশের হাত এড়াইবার জন্য রেল ষ্টেশনে চায়ের দোকানে চাকর হইয়াছেন, কলিকাতাতে কোন এক গৃহস্থ বাড়িতেও কিছুদিন বাসন-মাজা চাকরের চাকরী করিয়াছেন। চেহারাটা এই দিক দিয়া তাঁহার কাজে লাগিয়াছিল।

 কয়েকদিন যাবৎ রোল কলের সময় সুরপতিবাবুকে পাওয়া যাইতেছিল না। অফিসাররা অবশ্য অন্য সময়ে দেখিতে পাইতেন যে, তিনি ক্যাম্পেই আছেন। চতুর্থ দিনে কোট্টাম চিঠি দিয়া তাঁহাকে অফিসে ডাকাইয়া পাঠাইলেন। সুরপতিবাবু এই নিমন্ত্রণও প্রত্যাখ্যান করিলেন। কিন্তু তিনি একটি ভুলও এই সঙ্গে করিয়া ফেলিলেন। বিকালে গেট খুলিলে তিনি আর সকলের সঙ্গে খেলার মাঠে গিয়া হাজির হইলেন।

 খেলার মাঠটির উত্তরেই উঁচু স্থানে কমাণ্ডাণ্টের বাংলো। আরদালী সহ

১৮৯