পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেয়ালের কানে যায়, আর আমাদের প্রকাশ্য সঙ্কল্প সর্বত্র ঘোষিত হইবে, ইহাকে অধিক কিছু বলিয়া আমরা মনে করিলাম না। অর্থাৎ, খবরটা সকলে জানিয়াছেন, ইহাতে আমরা আনন্দিতই হইলাম।

 নির্দিষ্ট দিনে আসর বসিল, সুরপতি চক্রবর্তী উপন্যাসের প্রথম কিস্তি আসরে পেশ করিলেন, মানে পড়িয়া শুনাইলেন। উপন্যাস যাঁহার নিজেকে শেষ করিতে হইবে না, শুধু আরম্ভ করিবার দায়িত্বটুকই যাহার উপর ন্যস্ত, তাঁহার সুবিধা নিশ্চয় অধিক। সুরপতিবাবু নিশ্চিন্ত মনে বেপরোয়াভাবেই উপন্যাসের আদি পর্ব রচনা করিলেন।

 দ্বিতীয় পর্বের দায়িত্ব কাহার উপর ছিল, ঠিক মনে নাই। এইটুকু মনে আছে যে, সন্তোষবাবু, পঞ্চাননবাবু, প্রমথবাবু এবং অতীনবাবুও নিজ নিজ পর্ব রচনা করিয়াছিলেন এবং আসরে তাহা পঠিত হইয়াছিল।

 অষ্টপর্বের পঞ্চপর্ব শেষ হইল, কিন্তু একটা “কিন্তু” আসিয়া দেখা দিল। আমরা আবিষ্কার করিলাম যে, রচনা অগ্রসর হইয়াছে অর্ধেকের অধিক, কিন্তু আখ্যায়িকা বা ঘটনা মোটেই অগ্রসর হয় নাই এবং নায়ক তাহার ভ্রূণাবস্থার মধ্যেই একটি একাকার মূর্তিহীনতায় অপেক্ষা করিতেছে।

 ডিমে পক্ষিণীমাতা তা দেয়, ফলে খোলার তরল পদার্থটুকু শনৈঃ শনৈঃ বিহগমূর্তি গ্রহণ করিতে থাকে এবং একদিন ঠোঁট, পালক, ঠ্যাং ইত্যাদি লইয়া একটি শাবক খোলা ভাঙ্গিয়া বহির্গত হইয়া আসে। কিন্তু আমাদের অদৃষ্টে প্রকৃতির এই নিয়ম লঙ্ঘিত হইল। আমাদের পঞ্চতপার উগ্র মানসতাপে উপন্যাসের খোলার মধ্যেকার বাষ্পীয় পদার্থটুকু বাষ্পীয়ই রহিয়া গেল, একটি সর্বাঙ্গ মূর্তি তো দুরের কথা, একটা মাংসস্তূপ বা কবন্ধ মূর্তিতে পর্যন্ত তাহা দানা বাঁধিল না।

 আমরা অষ্টবজ্র ম্রিয়মাণ হইয়া পড়িলাম। অষ্টবজ্র সম্মেলনের এই পরিণতি দর্শনে আমাদের উৎসাহ একেবারে দমিয়া গেল। উপন্যাসের নায়ক বা কাহিনী সম্বন্ধে আমরা আশা ত্যাগ করিলাম।

১৯৯