পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ব্যসনে লিপ্ত ছিলেন। আর দিবানিদ্রাকে পুরাতনেরা কামজ-ব্যসনের মধ্যে প্রথম স্থানই দান করিয়াছেন। বাবুদের অর্ধেকেরও বেশী সংখ্যাটা এই ব্যসনের সেবায় নিমগ্ন ছিলেন। শুধু কতিপয় বাবু ছাত্র না হইয়াও অধ্যয়নরূপ তপস্যা করিতেছিলেন। বিশ্রাম ও ব্যসন লইয়া তখন বক্‌সা ক্যাম্পে মধ্যাহ্ন তাহার প্রহর যাপন করিতেছিল।

 এমন সময়ে খবর আসিল যে, সেনগুপ্ত (দেশপ্রিয়) বক্‌সা আসিয়াছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে সারা ক্যাম্পে খবরটি ছড়াইয়া পড়িল। যাঁহারা ঘুমাইয়াছিলেন, তাঁহারাও জাগিয়া বসিলেন। সকলের মনেই এক প্রশ্ন—সেনগুপ্ত কেন আসিয়াছেন? এবং কি খবর লইয়া আসিয়াছেন?

 আমাদের মনের গোপনে একটা আশাও বাসা বাঁধিল যে, নিশ্চয় একটা শুভ খবর লইয়া আসিয়াছেন। কিন্তু সে-আশাটাকে বিশেষ কোন মূর্তিতে স্পষ্ট করিতে আমরা বিরত রহিলাম। সারা ক্যাম্পটা শুধু একটী প্রশ্নের বড়শী-গাঁথা হইয়া প্রতীক্ষায় ঝুলিতে লাগিল যে, সেনগুপ্ত কেন আসিয়াছেন?

 সবুর করিলে মেওয়া ফলে, ধৈর্য ধরিলেও সব কিছু জানা, হয়তো পাওয়াও যায়। আমরাও এক সময়ে প্রশ্নের উত্তর পাইয়া গেলাম।

 সেনগুপ্ত বক্‌সা আসিয়াছেন আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে এবং গান্ধীজীর নির্দ্দেশেই তিনি আসিয়াছেন। বিলাতে গোলটেবিল বৈঠকে যাইবার পূর্বে গান্ধীজী সেনগুপ্তকে তাঁহার অনুগমন করিতে বলিয়া গিয়াছিলেন। যাইবার পূর্বে সেনগুপ্ত যেন বাঙলার বিপ্লীদের অভিমত ও মনোভাব জানিয়া যান, এই স্পষ্ট নির্দেশই গান্ধীজী দিয়াছিলেন। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের দাঙ্গা ও হিজলী বন্দী-শিবিরে গুলিবর্ষণের ব্যাপার সংঘটিত হয়, ফলে সেনগুপ্তের বিলাত গমন পিছাইয়া যায়। অধুনা সেই অবসর তিনি পাইয়াছেন।

 আমরা আরও জানিলাম যে, আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে কোন সরকারী কর্মচারী বা বাহিরের কোন তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত থাকিতে পারিবেন না। এমন কি, আমরা যদি গান্ধীজীকে দিবার জন্য কোন গোপন পত্র দেই, তাহা

২১১