পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সরকার তো দূরের কথা সেনগুপ্তও খুলিয়া দেখিবেন না। গান্ধীজীর অনুরোধক্রমেই গভর্নমেণ্ট আমাদের সঙ্গে সেনগুপ্তের এইভাবে সাক্ষাতে সম্মত হইয়াছেন এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা করিয়াছেন।

 বাঙলার বিপ্লবীদের মতামত পূর্বাহ্নে না জানিয়া ইংরেজের সঙ্গে কোনরকম আপোষ করা যে চলিতে পারে না, ইহাতে গান্ধীজীর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। সেদিন সত্যই বাঙলার বিপ্লবীদের এমন ক্ষমতা ছিল যে, ইংরেজের সঙ্গে আপোষের সমস্ত প্রচেষ্টা তাঁহারা ইচ্ছা করিলে পণ্ড করিয়া দিতে পারিতেন। বিশেষজ্ঞদের অনেকের অভিমত এই যে, গোলটেবিল বৈঠকের পর ১৯৩৫ সালের এ্যাক্ট বলিয়া ইংরেজের নিকট যাহা পাওয়া গিয়াছে, তাহার মূলে নাকি ছিল বাঙলার বিপ্লবীদেরই বোমা আর পিস্তল।

 সেনগুপ্ত আমাদের সঙ্গে দেখা করিতে আসিয়াছেন, কিন্তু আমাদের বলিতে আমরা নহি, বাঙলার বিপ্লবীদের নেতৃবর্গের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছেন। সুতরাং বক্সা ক্যাম্পে রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ও কর্মতৎপরতা দেখা দিল।

 সন্ধ্যার দিকে সাক্ষাতের ব্যবস্থা হইল। ক্যাম্পের চৌহদ্দীর বাহিরে কমাণ্ডাণ্টের বাঙলোর বিপরীত দিকে একটা বাড়িতে সিপাহীদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করিত, সেই স্কুলঘরেই সাক্ষাতের স্থান নির্বাচিত হইল।

 যতদূর মনে পড়ে, অনুশলন-পার্টির পক্ষ হইতে ত্রৈলোক্য মহারাজ, রবিবাবু ও প্রতুলবাবু গিয়াছিলেন এবং যুগান্তর পার্টির পক্ষ হইতে গিয়াছিলেন পূর্ণদাস, সুরেন ঘোষ, মনোরঞ্জন গুপ্ত, ভুপতি মজুমদার, ভূপেন দত্ত ও অরুণ গুহ! আর গিয়াছিলেন মাষ্টারমশায় যতীশ ঘোষ। এই দশজনের সম্মিলিত বৈঠকেই সেনগুপ্তের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলিতে লাগিল।

 এদিকে ক্যাম্পেও তিন-নম্বর ব্যারাকে পঞ্চানন বাবুর সীটে এক গোপন বৈঠক বসিল। জরুরী তলব পাইয়া লাইব্রেরী ঘরের জমাট আড্ডাটা ত্যাগ করিয়া আমাকেও অবশেষে এই বৈঠকে উপস্থিত হইতে হইল। গিয়া দেখি

২১২