পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তৎপর শরৎবাবুকে সঙ্গে করিয়া বিজয়ী সেনাপতির ন্যায় আগাইয়া খোলা দরজার পথে নির্দিষ্ট কামরায় গিয়া আসন গ্রহণ করিলাম।

 একে একে সকলেই উঠিলেন।

 যিনি চরমপত্র পেশ করিয়াছেন, তিনিও আসিলেন, অর্থাৎ মত-বিরোধ সত্ত্বেও তিনি বন্ধুদের ত্যাগ করিতে প্রস্তুত ছিলেন না।

 গাড়ীতে ঢুকিয়াই তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,—“শেষে ইণ্টারেই উঠলেন?”

 মাথা নাড়িয়া কহিলাম,—“হাঁ। বলেন যদি তবে নেমে পড়ি।”

 “—থাক কষ্ট করে দরকার নেই।”

 মুখের ভাবে বুঝিলাম, মনে মনে সন্তুষ্টই হইয়াছেন। তবে আমাকে হয়তো সহজে নাও ছাড়িতে পারেন।

 গাড়ি ছাড়িয়া দিল। প্লাটফর্ম হইতে “বন্দে মাতরম্” শব্দে সমবেত অভিনন্দন আসিল, আমরাও জানালা দিয়া গলা বাড়াইয়া চেঁচাইয়া উঠিলাম,—“বন্দে মাতরম্।”

 গাড়ি কলিকাতার দিকে মরি-কি-বাঁচি করিয়া ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটিয়া চলিল।

 লোহার লাইনে ও চাকার ঘর্ষণে একটানা একটা কর্কশ চীৎকার উঠিয়া গাড়িটার সঙ্গে সমান পাল্লা দিয়া চলিল। চোখ বুজিলে মনে হয়, এই শীতের দুপুরে একটা ক্ষিপ্ত চীৎকার গাড়িটার পিছনে তাড়া করিয়াছে এবং তারই হাত হইতে বাঁচিবার জন্য মাঠ-ঘাট-প্রান্তর সহরের উপর দিয়া গাড়িটা পাগলের মত ছুটিয়া চলিয়াছে। কিন্তু কিছুতেই এই ক্ষিপ্ত চীৎকার তার সঙ্গ ছাড়িতেছে না।

 কিছুক্ষণ যাইতেই বন্ধুরা বেশ জমাইয়া বসিলেন। আমি একপাশে জানালার ধারে বসিয়া বাহিরের উপর চোখ পাতিয়া রাখিয়াছিলাম।

 বাহির পৃথিবী হইতে বিচ্ছিন্ন জেলের আবদ্ধ জীবনযাপন করিয়াছি, চোখ ও মন দুই-ই দীর্ঘ উপবাসী হইয়াছিল। তাই কিছুই যাতে ফসকাইতে

১৮