পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম কিন্তু ষে যাত্রী-ওয়ালার ( পাণ্ডা ) সঙ্গে আমরা যাইতেছিলাম, তিনি আমার প্রতি কিছু কৃপাদৃষ্টি করার লক্ষণ দেখিলাম। কিছু দৌরাত্ম্যের সম্ভাবনা বিবেচনা করিয়া কালি রাত্রিতে যাত্রীর দল শ্লষ্টতে সরিয়া পড়িয়াছিলাম । সন্ন্যাসিনী । এখন ? শ্ৰী । এখন, বৈতরণী-তীরে আসিয়া ভাবিতেছি, দুই বার পারে কাজ নাই । এক ব1র ভাল । জল যথেষ্ট আছে । সন্ন্যাসিনী । সে কথাট। না হয় তোম। আমায় দুই দিন বিচার করিম। দেখ! যাইবে । তার পর বিচারে যাহ। স্থির হয়, তাহাই কবিও । বৈতরণী ত তোমার ভয়ে পলাইবে ন! ! কেমন, আমার সঙ্গে অসিবে কি ? ত্রীর মন টলিল খ্রীর এক পয়স। পুজি নাই । দল ছাড়িয়। আসিয় অবধি অহার হয় নাই ; ঐ দেখিতেছিল, ভিক্ষা এবং মৃতু এই দুষ্ট ভিন্ন উপায়। স্তর নাই । এই সন্নাসিনীর সঙ্গে যেন উপায়ান্তর তষ্টতে পারে বোপ হইল, কিন্তু তাহাতেও সন্দেহ উপস্থিত হইল । জিজ্ঞাস করিল, “একট! কথ। জিজ্ঞাস করিব ম ? তুমি দিনপাত কর কিসে ?” সন্ন্যাসিনী । ভিক্ষায় । শ্ৰী । আমি তাহ পারিল ন-বৈ তরণী তাহার অপেক্ষা সহজ বে:প হইতেছিল। সন্ন্যাসিনী । তােহ। তোমার করিতে হইবে না – আমি তোমার হইয়া ভিক্ষ করিব । শ্ৰী । বাছ, তোমার এই বয়স, তুমি আমার অপেক্ষা ছোট বৈ বড় হইবে না । তোমার এষ্ট রূপের রাশি — সন্ন্যাসিনী অতিশয় সুন্দরী-বুঝি শ্রীর অপেক্ষাও সুন্দরী । কিন্তু রূপ ঢাকিবার জন্ত আচ্ছা করিয়া বিভূতি মাখিয়াছিল। তাহাতে হিতে বিপরীত ইষ্টয়াছিল—বস ফান্বসের ভিতর আলোর মত রূপের আগুন আরও উজ্জ্বল হইয়। উঠিয়াছিল । ত্রীর কথার উত্তরে সন্ন্যাসিনা বলিল, “আমরা উদাসীন, সংসারভাগী, আমাদের কিছুতেই কোন ভয় নাই । ধৰ্ম্ম আমাদের রক্ষা করেন।” শ্ৰী ৷ ত যেন হইল। তুমি সন্ন্যাসিনী বলিয়। নির্ভয় । কিন্তু আমি বেলপাতের পোকার মত, তোমার সঙ্গে বেড়াইব কি প্রকারে ? তুমিই ব৷ লোকের কাছে এ পোকার কি পরিচয় দিবে ? বলিবে কি যে, উড়িয়া আসিয়া গায়ে পড়িয়াছে ? ২যু-২৩ 3న হাসিতে ভস্মাৰ্বত সন্ন্যাসিনী বিদ্য্যদীপ্ত মেঘাবৃত আকাশের স্যায় রূপমাধুরী প্রদীপ্ত হুইয়া উঠিল। সন্ন্যাসিনী বলিল, “তুমিও কেন বাছ। গ্রহণ কর না ?” ঐ শিহরিয়া উঠিল,—বলিল,—“সে কি ? আমি সন্ন্যাসিনী হইবার কে ?” সন্ন্যাসিনী । আমি তাহ হইতে বলিতেছি না । তুমি যখন সৰ্ব্বত্যাগ ইষ্টয়াছ বলিতেছ, তখন তোমার চিত্তে যদি পাপ না থাকে, তবে হইলেই ব। দোষ কি ? কিন্তু এখন সে কথা থাক—এখন ত বলিতেছি না । এখন এষ্ট বেশ ছদ্মবেশস্বরূপ গ্ৰহণ কর না তাতে হাসিল,—ফুল্লাপরে মধুর সেই এই বেশ দোষ কি ? শ্ৰী ! মাথ। মুড়াইতে হুইবে ? আমি সধবা । সন্ন্যাসিনী । আমি মাথা মুড়াই নাই দেখিতেছ। ঐ জটা ধারণ করিয়াছ ? সন্ন্যাসিনী । না, তাও করি নাই । তবে চুল গুলাতে কখনও তেল দিই না, ছাই মাখিরা রাখি, তাই কিছু জট পড়িয়া থাকিবে । শ্ৰী । চুলগুলি যেরূপ কুণ্ডলী করিয়া ফণী ধরিয়া আছে, আমার ইচ্ছা করিতেছে, একবার তেল দিয়৷ আঁচড়াইয়। বালিয়া দিষ্ট । সল্লী ৷ জন্মস্তিরে হইবে, যদি মানবদেহ পাই । এখন তোমায় সন্ন্যাসিনী সাজাইব কি ? স্ত্র । কেবল চুলে ছাই মাখিলেই কি সাজ হইবে ? সন্ন্যা ! ন-গৈরিক, রুদ্রাক্ষ, বিভূতি, সব আমার এই রাঙ্গ। ঝুলিতে আছে । সব দিব । ঐ৷ কিঞ্চিৎ ইতস্ততঃ করিয়া সম্মত হুইল । তখন নিভৃত এক বৃক্ষতলে বসিয়৷ সেই রূপসী সন্ন্যসিনী শ্রীকে আর এক রূপসী সন্ন। সিনী সাজাইল । কেশদামে ভস্ম মাখাইল, অঙ্গে গৈরিক পরাইল, কণ্ঠে ও বাহুতে রুদক্ষ পরাইল, সৰ্ব্বাঙ্গে বিভূতি লেপন করিল, পরে রঙ্গের দিকে মন দিয়া শ্রীর কপালে একটি চন্দনের টিপ দিল্প দিল । তখন ভুবনবিজয়াভিলাষী মধু মন্মথের ন্যায় দুজনে যাত্র করিয়া, বৈতরণী পার হষ্টয়, সে দিন এক দেবমন্দিরের অতিথিশালায় রাত্রিযাপন করিল ।