পাতা:বঙ্কিম-প্রসঙ্গ.djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিমচন্দ্র ও দীনবন্ধু byసె “আর এক জন আমার সহায় ছিলেন—সাহিতে আমার সহায়, সংসারে আমার সুখদুঃখের ভাগী—র্তাহার নাম উল্লেখ করিব মনে করিয়াও উল্লেখ করিতে পারিতেছি না । এই বঙ্গদর্শনের বয়ঃক্রম অধিক হইতে না হইতেই দীনবন্ধু আমাকে পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছিলেন। তাহার জন্ত বঙ্গসমাজ রোদন করিতেছিল, কিন্তু এই বঙ্গদর্শনে তাহার নামোল্লেখও করি নাই। কেন, তাহ কেহ বুঝে না । আমার যে দুঃখ, কে তাহার ভাগী হইবে ? কাহার কাছে দীনবন্ধুর জন্ত কাদিলে প্রাণ জুড়াইবে ? অন্তের কাছে দীনবন্ধু সুলেখক, আমার কাছে প্রাণতুল্য বন্ধু—আমার সঙ্গী। সে শোকে পাঠকের সহৃদয়ত হইতে পারে না বলিয়, তখনও কিছু বলি নাই, এখনও আর কিছু বলিলাম না।” বস্তুতঃ আমরা সকলেই লক্ষ্য করিতাম, দীনবন্ধুর মৃত্যুর পর হইতে বঙ্কিমচন্দ্র তাহার কথা উত্থাপন করিতেন না। যদি কেহ দীনবন্ধুর কথা বা তাহার রহম্ভপটুতার কথা কহিত, তখনই বঙ্কিমচন্দ্রের একটা পরিবর্তন লক্ষিত হইত, তিনি মৌনাবলম্বন করিয়া থাকিতেন। ইহাতে আমরা বুঝিতাম যে, তিনি দীনবন্ধুর শোক ভুলিতে পারেন নাই, দীনবন্ধুর স্মৃতি র্তাহার কষ্টকর হইয়াছিল। প্রায় আট নয় বৎসর পরে “আনন্দ-মঠে”র উৎসর্গ-পত্রে “কুমারসম্ভব” হইতে একটা শ্লোক উদ্ধত করিয়া আক্ষেপ করিয়াছিলেন, “হে ক্ষণভিন্নসৌহৃদ ! আমাকে ফেলিয়া কোথায় গেলে!” বঙ্কিমচন্দ্র তাই বলিয়াছিলেন, দীনবন্ধু “আমার কাছে প্রাণভুল বন্ধু”—বঙ্কিমচন্দ্রের হৃদয় বড় স্নেহপ্ররণ ছিল।