পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন বৎসর পন্ধেব এই গ্রন্থ রচনাকালে গ্রন্থকার জানিতে পারেন নাই যে তিনি নতেন পদ্ধতির পরীক্ষা পদবীর দৃঢ় হইয়াছেন। এবং তৎকালে সর্বীয়মানস মাত্র রঞ্জনাভিলাষজনিত এই কাব্যদ্বয়কে সাধারণ সমীপবত্তীর্ণ করিবার কোন কল্পনা ছিল না। কিন্তু কতিপয় সরসজ্ঞ বন্ধর মনোনীত হইবায় তাঁহাদিগের অন্যরোধানসারে এক্ষণে জনসমাজে প্রকাশিত হইল। গ্রন্থকার সােবকম্পমাডিজত ফলভোগে অস্বীকার নহেন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত নবীন বয়সের অজ্ঞতা ও অবিবেচনাজনিত তাবৎ লিপিদোষের এক্ষণে দন্ড লইতে প্রস্তুত নহেন। গ্রন্থকার।” বাল্যরচনা : চতুৰ্দশ বৎসর বয়স হইতেই বঙ্কিমচন্দ্রের কবিতা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইতে থাকে। কবিবর ঈশ্বরচন্দ্ৰ গগুপ্ত নিজ ‘সংবাদ প্রভাকরে’ তরুণদের কবিতা ছাপিয়া তাহাদিগকে কবিতা রচনায় বিশেষ উৎসাহ দান করিতেন। তরণ ছাত্রদের কবিতার প্রাইজ দেওয়া হইত। তিনি তাঁহাদের কবিতার বাদপ্রতিবাদেও উৎসাহ দিতেন। ‘সংবাদ প্রভাকরে’র স্তম্ভে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দীনবন্ধ মিত্র ও দ্বারিকানাথ অধিকারীর মধ্যে যে কবিতায় বাদ-প্রতিবাদ হইত। তাহা কবিতার লড়াই বা কবিতা-যাদ্ধ নামে সেকালে প্রসিদ্ধ ছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রায় সমাদয় পদ্য রচনা ‘সংবাদ প্রভাকরে” স্থান পায়। তাঁহার একটি কবিতা মাত্র প্রকাশিত হয়—শ্ৰীীরামপাের মিশন কর্তৃক প্রকাশিত “সমাচার দপণে”। ঈশ্বরচন্দ্ৰ গপ্তের উৎসাহদান সম্পবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্ৰ লিখিয়াছেন —“আমি নিজে প্রভাকরের নিকট ঋণী। আমার প্রথম রচনাগলি প্রভাকরে প্রকাশিত হয়। সে সময়ে ঈশ্বরচন্দ্র গঞ্জ আমাকে বিশেষ উৎসাহ দান করেন।” (ভূমিকা : ঈশ্বরচন্দ্র গপ্তের কবিতাসংগ্রহ) অসম্পর্শ রচনা ; এই অংশে চারিটি অসম্পণে রচনা স্থান পাইয়াছে। “রাজমোহনের সত্ৰী” বঙ্কিমচন্দ্ৰ লিখিত Rajmoham's Wife নামক উপন্যাসের তাঁহারই অনদিত কয়েকটি অধ্যায়। এ সমাদয় তাঁহার ভ্রাতুষ্পপত্র শচীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘বারিবাহিনী” পাস্তকে নয়টি অধ্যায়ে (প. ১-৫০) সন্নিবেশিত করেন। Rajmoham's Wife কিশোরীচাঁদ মিত্র সম্পাদিত Indiam Field সংবাদপত্রে ১৮৬৪ খ্রীস্টাব্দে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হইয়াছিল। অন্য রচনা তিনটি যে যে স্থান হইতে গহীত রচনা-শেষে তাহার নিন্দেশ দেওয়া হইয়াছে। উপন্যাস ব্যাতিরিক্ত বঙ্কিমচন্দ্রের যাবতীয় বাঙ্গালা রচনা (যতদৱ এ, পৰ্যন্ত জানা বা পাওয়া গিয়াছে) এই খন্ডের অন্তভুক্ত হইয়াছে। মননৰ সাহিত্যের বিভিন্ন বিভাগে-সাহিত্য, ইতিহাস, কৃতৃিত্ব অসামান্য। সত্যকার ক্লাসিকস-এর যাবতীয় গণ্য তুহার রচনার মধ্যে রহিয়াছে, কুরণ তিনি পরাতন হইয়াও নােতন। সত্তর-আশী বৎসর পুত্বে তিনি যাহা বলিয়া গিয়াছেন, আজিও তাহা বাসি হইয়া যায় নাই; পড়িলে আনকোর তাজা ঠেকিবে। আবার কত বিভিন্ন, বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের ব্যুৎপত্তি ছিল, বঙ্কিম-সাহিত্য পাঠ করিলে তা হ্রাও সহজেই উপলব্ধি হইবে। এ বিষয়ে মনস্বী বিপিনচন্দ্ৰ পালের উক্তি বিশেষভাবে সমরণীয় : ** “বঙ্কিমচন্দুের গ্রন্থাবলী পড়িবার সময়, তিনি যে সে সময়ের কোন তত্ত্বটা জানিতেন না, এদেশের বা ইউরোপের কোন লেখকের বা পন্ডিতের সঙ্গে যে তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল না, ইহা ভাবিয়া উঠিতে ক্যােণ্ট, হেগেল, কুজো, কোমটে এবং ইংরাজ চিন্তানায়ক স্পেনসার, মিল, বেন্থাম, হকসলি টিন্ডেল, ফ্রেডরিক হ্যারিসন প্রভৃতি, আর একদিকে মেথ, আরনলন্ড, রেনাঁ প্ৰভৃতি, এমন কি আধনিক প্রত্নতত্ত্ব বা spiritualism বা মেসমোরিজম (messmerism) পৰ্যন্ত তাঁর কতটা কেবল জানা নয়, আয়ত্ত ছিল, -এ সকলের বিস্তর প্রমাণ তাঁর লেখার মধ্যে রহিয়াছে। অথচ কোথাও একটা অপপ্রয়োগ বা পান্ডিত্য চেন্টা দেখা যায় না। বঙ্কিমচলেদুর প্রতিভা যে কত বড় ছিল, ইহাতেই আমরা তাহার একটা অতি প্রকৃষ্ট প্রমাণ প্রাপ্ত হই। নিজের শক্তির উপরে যে দাঁড়াইতে পারে, নিজের প্রতিভার মৌলিকতা যে বাঝে, সে পরের বন্ধু লইয়া বড়াই করিতে যাইবে কেন ? সাবরাজ্যে যে প্রতিষ্ঠিত, সে পরের নিকট হইতে করাই লইয়া থাকে, অপরের যশোভাতি বা জয়শ্ৰী ধার করিয়া আনিবার জন্য ব্যগ্ন হয় না। ইহাতে যে তাঁর ইলজৎ যায়।” (“নারায়ণ"-জ্যৈষ্ঠ ১৩:২২, পা ৬৮৫-৬) প্রকাশের