পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী অলপ হইলেও, তাহাদিগের জীবন-বত্ত মনষ্যগণের অমল্য শিক্ষাস্থল। জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে এরপ শিক্ষা আর কোথাও পাওয়া যায় না। নীতিশাস্ত্র, ধর্মশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শন প্রভৃতি সৰ্ব্বাপেক্ষা এই প্রধান শিক্ষা। দভাগ্যবশতঃ ইহাদিগের জীবনের গঢ়ি তত্ত্ব সকল অপরিজ্ঞেয়। কেবল দাই জন আপনি আপন জীবন-বত্ত লিখিয়া রাখিয়া গিয়াছেন। একজন লোকশিক্ষার্পণ লোকসংখ্যা গণনা করিয়া জানা গিয়াছে যে, বাঙ্গালা দেশে না কি ছয় কোটি ষাটি লক্ষ মনকেষ্য আছে। ছয় কোটি যাটি লক্ষ মনষ্যের দ্বারা সিদ্ধ না হইতে পারে, বঝি পথিবীতে এমন কোন কাৰ্য্যই নাই। কিন্তু বাঙ্গালীর দ্বারা কোন কাৰ্য্যই সিদ্ধ হইতেছে না। ইহার অবশ্য কোন কারণ আছে। লৌহ অস্ত্রে পরিণত হইলে তদ্দ্বারা প্রস্তর পর্য্যন্ত বিভিন্ন করা যায়, কিন্তু লৌহমাত্রেরই ত সে গণ নাই। লৌহকে নানাবিধ উপাদানে প্রস্তুত, গঠিত, শাণিত করিতে হয়। তবে লৌহ ইস্পাত হইয়া কাটে। মনষ্যকে প্রস্তুত, উত্তেজিত, শিক্ষিত করিতে হয়, তবে মনষ্যের দ্বারা কায্য হয়। বাঙ্গালার ছয় কোটি ষাটি লক্ষ লোকের দ্বারা যে কোন কায্য হয় না, তাহার কারণ এই যে, বাঙ্গালার লোকশিক্ষা নাই। যাঁহারা বাঙ্গালার নানাবিধ উন্নতি সাধনে প্রবত্ত, তাঁহারা লোকশিক্ষার কথা মনে করেন না, আপনি আপন বিদ্যাবদ্ধিপ্রকাশেই প্ৰমত্ত। ব্যাপার বড় অলপ আশচয্য নহে। ইহা কখনও সম্ভব নহে যে, বিদ্যালয়ে পান্তক পড়াইয়া, ব্যাকরণ জ্যামিতি শিখাইয়া, সপ্তকোটি লোকের শিক্ষাবিধান করা যাইতে পারে। সে শিক্ষা শিক্ষাই নহে, এবং সে উপায়ে এ শিক্ষা সম্ভবও নহে। চিত্তবাত্তি সকলের প্রকৃত অবস্থা, সব সব কায্যে দক্ষতা, কৰ্ত্তব্য কায্যে উৎসাহ, এই শিক্ষাই শিক্ষা। আমাদিগের এমনি একটকু বিশ্বাস আছে যে, ব্যাকরণ জ্যামিতিতে সে শিক্ষা হয় না এবং রামমোহন রায় হইতে ফটিকচাঁদ স্কোয়ার পয্যন্ত দেখিলাম না যে, কোন ইংরেজী-নবীশ সে বিষয়ে কোন কথা কহিয়াছেন। ইউরোপে এইরপ লোকশিক্ষা নানাবিধ উপায়ে হইয়া থাকে। বিদ্যালয়ে প্রসিয়া প্রভৃতি অনেক দেশে আপামর সাধারণ সকলেরই হয়। সংবাদপত্র সে সকল দেশে লোকশিক্ষার একটি প্রধান উপায়। সংবাদপত্র লোকশিক্ষার যে কিরােপ উপায়, তাহা এদেশীয় লোক সহজে অন্যভব করিতে পারেন না। এদেশে এক এক ভাষায় খান দশ পোনের সংবাদপত্র; কোনখানির গ্রাহক দাই শত, কোনখানির গ্রাহক পাঁচ শত, পড়ে পাঁচ সাত হাজার লোক। ইউরোপে এক এক দেশে সংবাদপত্র শত শত, সহস্ৰ সহস্র। এক একখানির গ্রাহক সহস্ৰ সহস্ৰ, লক্ষ লক্ষ। পড়ে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি লোক। তারপর নগরে নগরে সভা, গ্রামে গ্রামে বক্তৃতা। যাহার কিছু বলিবার আছে, সেই প্রতিবাসী সকলকে সমবেত করিয়া সে কথা বলিয়া শিখাইয়া দেয়। সেই কথা আবার শত শত সংবাদপত্রে প্রচারিত হইয়া শত শত ভিন্ন গ্রামে, ভিন্ন নগরে প্রচারিত, বিচারিত এবং অধীত হয়; লক্ষ লক্ষ লোকে সে কথায় শিক্ষিত হয়। এক একটা ভোজের নিমন্ত্রণেই সবাদ খাদ্য চক্ৰবাণ করিতে করিতে ইউরোপীয় লোকে যে শিক্ষা প্রাপ্ত হয়, আমাদের তাহার কোন অনভবই নাই। আমাদিগের দেশের যে সংবাদপত্র সকল আছে, তাহার দন্দশার কথা ত পকেবই বলিয়াছি; বক্তৃতা সকল ত লোকশিক্ষার দিক দিয়াও যায় না; তাহার বহ কারণের মধ্যে একটি প্রধান কারণ এই যে, তাহা কখনও দেশীয় ভাষায় উক্ত হয় না। অতি অলপ লোকে শনে, অতি অলপ লোকে পড়ে, আর অলপ লোকে বঝে; আর বক্তৃতাগলি অসার বলিয়া আরও অলপ লোকে তাহা হইতে শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়। এক্ষণকার অবস্থা এইরূপ হইয়াছে বটে, কিন্তু চিরকাল যে এদেশে লোকশিক্ষার উপায়ের অভাব ছিল, এমত নহে। লোকশিক্ষার উপায় না থাকিলে শাক্যসিংহ কি প্রকারে সমগ্র ভারতবর্ষকে বৌদ্ধধৰ্ম্ম শিখাইলেন ? মনে করিয়া দেখ, বৌদ্ধধর্মের কািট তােক সকল বকিতে

  • বঙ্গদশন, ১২৮৫), অগ্রহায়ণ।

Sa V