পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম রচনাবলী “যে দিন বিমলা যবন-বধ করিয়া। বৈধব্যের প্রতিশোধ করিয়াছিল, সেই দিন অবধি আমি কন্যা দৌহিত্রী লইয়া যবন ভয়ে নানা সন্থানে অজ্ঞাতে ভ্ৰমণ করিতেছিলাম, সেই দিন অবধি তিলোত্তমার রোগের সঞ্চার। যে কারণে রোগের সঞ্চার, তাহা তুমি বিশেষ অবগত আছ।” জগৎ সিংহের হৃদয়ে শেল বিধিল । “সে অবধি তাহাকে নানা সন্থানে রাখিয়া নানা মত চিকিৎসা করিয়াছি, নিজে যৌবনাবধি চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়াছি, অনেক রোগের চিকিৎসা করিয়াছি; অন্যের অজ্ঞাত অনেক ঔষধ জানি। কিন্তু যে রোগ হৃদয়মধ্যে, চিকিৎসায় তাহার প্রতীকার নাই। এই সস্থান অতি নিজজন বলিয়া ইহারই মধ্যে এক নিভৃত অংশে আজ পাঁচ সাত দিন বসতি করিতেছি। দৈবযোগে তুমি এখানে আসিয়াছ দেখিয়া তোমার আশীবাবলগায় পত্ৰ বধিয়া দিয়াছিলাম। পৰ্ব্বব্যাবধি অভিলাষ ছিল যে, তিলোত্তমাকে রক্ষা করিতে না পারিলে, তোমার সহিত আর একবার সাক্ষাৎ করাইয়া অন্তিম কালে তাহার অন্তঃকরণকে তৃপিত করিব। সেই জন্যই তোমাকে আসিতে লিখিয়াছি। তখনও তিলোত্তমার আরোগ্যের ভরসা দরি হয় নাই; কিন্তু বঝিয়াছিলাম যে, দই দিন মধ্যে কিছ উপশম না হইলে চরম কাল উপস্থিত হইবে। এই জন্যই দই দিন পরে পত্ৰ পড়িবার পরামর্শ দিয়াছিলাম। এক্ষণে যে ভয় করিয়াছিলাম, তাহাই ঘটিয়াছে। তিলোত্তমার জীবনের কোন আশা নাই। জীবনদীপ নিৰ্ব্বাণোন্মখ হইয়াছে।” . এই বলিয়া অভিরাম স্বামী পনেকবার রোদন করিতে লাগিলেন। জগৎ সিংহ ও রোদন করিতেছিলেন। স্বামী পানশাচ কহিলেন, “অকস্মাৎ তোমার তিলোত্তমা সন্নিধানে যাওয়া হইবেক না ; কি জানি, যদি এ অবস্থায় উল্লাসের আধিক্য সহ্য না হয়। আমি পকেবা বলিয়া রাখিয়াছি যে, */ তোমাকে আসিতে সংবাদ দিয়াছি, তোমার আসার সম্পভাবনা আছে। এই ক্ষণে আসার সংবাদ দিয়া আসি, পশ্চাৎ সাক্ষাৎ করিও ।” এই বলিয়া পরমহংস, যে দিকে ভগনাট্টালিকার অন্তঃপর, সেই দিকে গমন করিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে প্রত্যাগমন করিয়া রাজপত্রকে কহিলেন, “আইস।” রাজপত্র পরমহংসের সঙ্গে অন্তঃপরাভিমাখে। গমন করিলেন। দেখিলেন, একটি কক্ষ অভগন আছে, তন্মধ্যে জীর্ণ ভগন পালওক, তদ্যুপরি ব্যাধিক্ষীণা, অথচ অনতিবিলপতির পরাশি তিলোত্তমা শয়নে রহিয়াছে; এ সময়েও পািকব লাবণ্যের মাদলতর-প্রভাব পরিবেপ্টিত রহিয়াছে; নিৰ্ব্ববাণোন্মািখ প্ৰভাততারার ন্যায় মনোমোহিনী হইয়া রহিয়াছে। নিকটে একটি বিধবা বসিয়া অঙ্গে হস্তম্যাডজািন করিতেছে ; সে নিরাভরণা, মলিনা, দীনা বিমলা। রাজকুমার তাহাকে প্রথমে চিনিতে পারিলেন না, কিসেই বা চিনিবে, যে সিথরযৌবনা ছিল, সে এক্ষণে প্রাচীনা হইয়াছে। যখন রাজপত্র আসিয়া তিলোত্তমার শয্যাপাশে বা দাঁড়াইলেন, তখন তিলোত্তম নয়ন মাদ্রিত করিয়া ছিলেন। অভিরাম স্বামী ডাকিয়া কহিলেন, “তিলোত্তমে!! রাজকুমার জগৎ সিংহ আসিয়াছেন।” তিলোত্তমা নয়ন উন্মীলিত করিয়া জগৎ সিংহের প্রতি চাহিলেন ; সে দস্টি কোমল, কেবল স্নেহব্যঞ্জক; তিরস্কারণাভিলাষের চিহ্নমাত্র বাডিজত। তিলোত্তম চাহিবামাত্র দস্পিট বিনত করিলেন ; দেখিতে দেখিতে লোচনে দর দর ধারা বহিতে লাগিল। রাজকুমার আর থাকিতে পারিলেন না; লতাজা দরে গেল ; তিলোত্তমার পদপ্রান্তে বসিয়া নীরবে নয়নাসারে তাঁহার দেহলতা সিক্ত করিলেন। একবিংশ পরিচ্ছেদ ঃ সাফলে নিৰ্ম্মফল স্বপন পিতৃহীনা অনাথিনী, রােপনশয্যায়;—জগৎ সিংহ তাঁহার শয্যাপাশেবা”। দিন যায়, রাত্রি যায়, আর বার দিন আসে ; আর বার দিন যায়, রাত্রি আসে! রাজপতি-কুল-গৌরব তাহার। ভগন পালঙ্কের পাশে বসিয়া শশ্রষা করিতেছেন; সেই দীনা, শব্দহীনা বিধবার অবিরল কায্যের সাহায্য করিতেছেন। আধিক্ষীণা দঃখিনী তাঁহার পানে চাহে কি না—তার শিশিরনিপীড়িত পদ্মমখে পৰ্ব্বকালের সে হাসি আসে কি না, তাহাঁই দেখিবার আকাঙক্ষায় তাহার মািখপানে চাহিয়া আছেন। > ひミ