পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\তৃ৩ |ায় খণড প্রথম পরিচ্ছেদ ঃ ভূতপকেব “কন্টোহযং খল- ভূত্যভাব।” রত্নাবলী যখন নবকুমার কপালকুণডলাকে লইয়া চটি হইতে যাত্রা করেন, তখন মতিবিবি পথান্তরে বদধীমানাভিমখে যাত্ৰা করিলেন। যতক্ষণ মতিবিবি পথাবাহন করেন, ততক্ষণ আমরা তাঁহার পাকবািবত্তান্ত কিছ, বলি। মতির চরিত্র মহাদোষে কলাষিত, মহাদগণেও শোভিত। এরপ চবিত্রেব বিস্তারিত বত্তোন্তে পাঠক মহাশয় অসন্তুস্ট হইবেন না। যখন ইহার পিতা মহম্মদীয ধমাবলম্বন করিলেন, তখন ইহার হিন্দ নাম পরিবত্তিত হাইযা লৎফ-উন্নিসা নােম হইল। মতিবিবি কোন কালেও ইহার নাম নহে। তবে কখনও কখনও ছদ্মবেশে দেশবিদেশে ভ্ৰমণকালে ঐ নােম গ্রহণ করিতেন। ইহার পিতা ঢাকায় আসিয়া রাজকায্যে নিযক্ত হইলেন। কিন্তু তথায় অনেক নিজদেশীয় লোকের সমাগম। দেশীয় সমাজে সমাজচ্যুত হইয়। সকলের থাকিতে ভাল লাগে না। অতএব তিনি কিছ. দিনে সবাদারের নিকট প্রতিপত্তি লাভ করিখা তাঁহার সহৃদয় অনেকানেক ওমরাহের নিকট পত্রসংগ্রহপড়ববর্তৃক সপরিবারে আগ্ৰায় অসিলেন । আকবর শাহের নিকট কাহারও গণ অবিদিত থাকিত না ; শীঘ্রই তিনি ইহার গণগ্রহণ করিলেন। লৎফ-উন্নিসার পিতা শীঘ্রই উচ্চপদস্থ হইয়া আগ্রার প্রধান ওমরাহ মধ্যে গণ্য হইলেন। এদিকে লংফ-উন্নিসা ক্ৰমে বয়ঃপ্রাপ্তত হইতে লাগিলেন। আগ্রাতে আসিয়া তিনি পারসীক, সংস্কৃত, নীতা, গীত, রাসবাদ ইত্যাদিতে সশিক্ষিতা হইলেন। রাজধানীর অসংখ্য বপবতী গণিবতীদিগের মধ্যে অগ্রগণ্যা হইতে লাগিলেন। দভাগ্যবশতঃ বিদ্যাসম্বন্ধে তাঁহার যােদশ শিক্ষP হইয়াছিল, ধৰ্ম্মসম্বন্ধে তাঁহার কিছই হয় নাই। লৎফ-উল্লিসার বয়স পণ্য হইলে প্রকাশ পাইতে লাগিল যে, তাঁহার মনোবাত্তি সকল দন্দমবেগবতী। ইন্দ্রিয়দমনে কিছমাত্র ক্ষমতাও নাই, ইচ্ছাও নাই। সদসতে সমান প্রবত্তি। এ কায্য সৎ, এ কায্য অসৎ, এমত বিচার করিয়া তিনি কোন কৰ্ম্মে প্রবত্ত হইতেন না; যাহা ভাল লাগিত, তাহাই করিতেন। যখন সংকৰ্ম্মে অন্তঃকবণ সখী হইত, তখন সৎকৰ্ম্ম করিতেন ; যখন অসৎকমে আন্তঃকরণ সখী হাইতি, তখন অসৎকম করিতেন ; যৌবনকালের মনোবাত্তি দদািম হইলে যে সকল দোষ জন্মে, তাহা লৎফ-উন্নিসাসম্বন্ধে জন্মিল! তাঁহার পািব্ব স্বামী বত্তমান-ওমরাহেরা কেহ তাঁহাকে বিবাহ করতে সক্ষমত হইলেন না। তিনিও বড় বিবাহের অন্যরাগিণী হইলেন না। মনে মানে ভাবিলেন, কুসমে কুসমে বিহারিণী ভ্ৰমরীর পক্ষচ্ছেদ কেন করাইব ? প্রথমে কাণাকণি, শেষে কালিমাময কলঙ্ক রাটিল। তাঁহার পিতা বিরক্ত হইয়া তাঁহাকে আপন গহ হইতে বহিৎকৃত করিষা দিলেন । লৎফ-উগ্লিসা গোপনে যাহাদিগকে কৃপা বিতরণ করিতেন, তন্মধ্যে যদুবরাজ সেলিম একজন ৷ একজন ওমরাহেব কলকলঙক জন্মাইলে, পাছে আপনি আপক্ষপাতী পিতার কোপােনলে পড়িতে হয়, সেই আশঙ্কায় সেলিম এ পর্য্যন্ত লৎফ-উন্নিসাকে আপন অবরোধবাসিনী করিতে পারেন নাই । এক্ষণে সংযোগ পাইলেন। রাজপতপতি মানসিংহের ভগিনী, যােবরাজের দুধানা মহিষী ছিলেন । যােবরাজ লংফ-উন্নিসাকে তাঁহার প্রধানা সহচরী করিলেন। লৎফ-উন্নিসা প্রকাশ্যে বেগমের সখী, পরোক্ষে যােবরাজের অনগ্ৰহ ভাগিনী হইলেন। লৎফ-উক্লিাসার ন্যায়। বদ্ধিমতী মহিলা যে অলপ দিনেই রাজকুমারের হৃদয়াধিকার করিবেন, ইহা সহজেই উপলবিধ হইতে পারে। সেলিমের চিত্তে তাঁহার প্রভুত্ব এরপে প্রতিযোগিশন্যে হইয়া উঠিল যে, লৎফ-উন্নিসা উপযন্ত সময়ে তাঁহার পাটরাণী হইবেন, ইহা তাঁহার সিথর প্রতিজ্ঞা হইল। কেবল লৎফ-উন্নিসার স্থির প্রতিজ্ঞা হইল, এমত নহে; রাজপরিবাসী সকলেরই উহা সম্ভব বোধ হইল। এরােপ আশার স্বপেন লৎফ-উন্নিসা জীবন বাহিত করিতেছিলেন, এমত সময়ে নিদ্ৰাভঙ্গ হইল। আকবর শাহের কোষাধ্যক্ষ (আকতিমাদ-উদ্দৌলা) খাজা আয়াসের কন্যা মেহের-উন্নিসা যবনকুলে প্রধােনা সন্দেরী। একদিন কোষাধ্যক্ষ রাজকুমার সেলিম ও অন্যান্য S v R